আজ বাবা দিবস। ঠিক কোনদিক দিয়ে শুরু করব বা বলব, বুঝতে পারছি না। বাবা আমাদের রেখে চিরতরে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ সালে ৮৩ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন রোগে ভুগেছেন। রোগ জটিল হলেও আমাদের অনবরত সেবাশুশ্রূষা এবং নার্সিং এর কারণে আল্লাহপাক অনেক বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন তাকে। মারা যাবার বছর দুয়েক আগে থেকে স্মৃতিশক্তি বেশ কমে গিয়েছিল। ভুলভাল নামাজ পড়তেন। কিন্তু অবাক হয়ে দেখতাম, সেই অবস্থাতেও উনি সেজদা থেকে মাথা তুলতেন না দীর্ঘ সময় ধরে। বাবাকে সবসময় দেখেছি, আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য খুব দোয়া করতেন। আমরা কখনো বাবা-বা মায়ের অবাধ্য বা বেয়াদবি করিনি তাদের সাথে।
সেই যে ছোট বেলায় বাবা শেখালেন, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সগীরা’, বাবা মায়ের জন্য দোয়া করা, তা আমার মৃত্যু পর্যন্ত জারি থাকবে, এটা ইনশাআল্লাহ নিশ্চিত বলতে পারি। বাবা সমসময় বলতেন, কখনো কারো চোখের পানি এবং দীর্ঘশ্বাসের কারণ হবে না। কারো দুর্বলতা বা অসহায়ত্বের সুযোগ নেবে না। কারো হক নষ্ট করবে না। মুরুব্বি বা বয়স্কদের সাথে বেয়াদবি করবে না। সবসময় নিজেকে অন্যের চোখে বিচার করবে।
বিজ্ঞাপন
বাবা আমাদের সত্যবাদী বানিয়েছিলেন। যদি ফয়সালা হয়ে যায়, যদি অন্যের মনে শান্তি আসে, তাহলে নিজে কোনো ভুল বা দোষ না করলেও দু:খ প্রকাশ বা সরি বলতে এক মুহূর্ত দেরি করবে না। ভুল করলে হাজারবার ক্ষমা চাইতে দ্বিধা করবে না। আল্লাহ ও রসূলের (সা.) প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবে সর্বদা অন্ত:করণ দিয়ে। আল্লাহকে স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে রসূল (সা.) এর প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করবে সবসময়।
এগুলো ছিল আমাদের জীবন দর্শন, বাবার শিক্ষা, যা কায়েম করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে গেছি আমরা। চাকরিতে জয়েন করার আগেই বাবা বলেছিলেন, জীবনে কোনো দিন হারাম উপার্জন নিয়ে ঘরে ঢুকবে না। তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শরীরে যেন একফোঁটা হারাম রক্ত প্রবেশ না করে।
বাবার দীক্ষা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছি। তিনি পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন আমাদের ওপর।
চাকরি জীবনে শুধু আর্থিক সততা নয়, কখনো কোনো দিন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া টেবিলে ফাইল রেখে বাসায় যাইনি। কখনো কাউকে বলিনি, আজ নয়, আর একদিন আসবেন। প্রতিটি পোস্টিং বা কাজকে Own করেছি। এমন কোনো অন্যায় নেই, যার প্রতিবাদ করিনি বা বাধা দেইনি। আল্লাহপাক সাক্ষী।
বিজ্ঞাপন
হে আমার রব, আমার বাবা তোমার মেহমান হয়ে তোমার কাছে চলে গিয়েছেন। মেহমানকে কষ্ট বা শাস্তি দেওয়া তোমার নামের সঙ্গে, তোমার গুণের সঙ্গে যায় না। আমার বাবাকে ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করুন এবং পরকালে বাবার সাথে আমাদের মিলিত করুন। জগতের সকল বাবার উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।
লেখক: সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

