অসাবধানতায় হঠাৎ শরীরের কোনো অংশ আগুনে পুড়ে যেতে পারে। কিংবা ছ্যাঁকা লাগতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন অনেকে ভেবে উঠতে পারেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানে ফোস্কা যেন না হয় সেজন্য বরফ ঘষা হয়। এরপর ক্ষতস্থানে মলম লাগানো হয়। কিন্তু পুড়ে যাওয়া ত্বকে বরফ লাগালে কি উপকার মেলে? নাকি আরও ক্ষতি হতে পারে?
পুড়ে যাওয়া ক্ষতের প্রকারভেদ
আগুনে পোড়ার মাত্রা এবং তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘বার্ন’-কে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে হয়েছে—

ফার্স্ট ডিগ্রি: যখন ত্বকের কেবল বাইরের অংশ (এপিডারমিস) পুড়ে যায় তখন একে ফার্স্ট ডিগ্রি বলা যায়। এই যেমন- সূর্যালোক থেকে ট্যান। এই ধরনের পোড়ার কারণে কখনো কখনো ত্বকের ওপর জ্বালা সৃষ্টি হতে পারে।
সেকেন্ড ডিগ্রি: এক্ষেত্রে ত্বকের ভেতরের অংশ (ডারমিস) পুড়ে যায়। এই ধরনের পোড়ার ঘটনায় ত্বকে প্রচণ্ড জ্বলুনি শুরু হয় এবং বড় আকারের ফোস্কা তৈরি হয়।
বিজ্ঞাপন
থার্ড ডিগ্রি: এ ক্ষেত্রে ত্বক কালো বা সাদা আকার ধারণ করতে পারে। পরিস্থিতি খারাপ হলে ত্বকের নীচের ফ্যাট এবং হাড়ও পুড়ে যায়। এই ধরনের ঘটনায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

পুড়ে গেলে বরফের ব্যবহার
বরফের উপস্থিতি ক্ষতস্থানের জ্বালাভাব কমায়। পাশাপাশি, সেখানে ফোস্কা তৈরি হয় না। তাই প্রথমিকভাবে বরফ ব্যবহার করলে পোড়া স্থানে উপকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অত্যধিক বরফের ব্যবহার অনেক সময়েই পোড়া অংশের আরও ক্ষতি করে। বরফের ব্যবহারে পোড়া জায়গায় ‘ফ্রস্ট ইনজুরি’ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্ষতস্থান সেরে উঠতে সময় লাগে। আবার অনেক সময় বরফের ব্যবহারে কোনো কোনো সেকেন্ড ডিগ্রি ক্ষত থার্ড ডিগ্রিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
পুড়ে গেলে মাখন বা টুথপেস্ট ব্যবহার করা কি উপকারী?
অনেক সময়ে পুড়ে যাওয়ার পর ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ক্ষতস্থানে মাখন লাগাতে বলা হয়। কেউ কেউ আবার ক্ষতস্থানে টুথপেস্ট লাগান। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এভাবে ক্ষতস্থানে বাড়তি সংক্রমণ হতে পারে।

ত্বকের কোথাও পুড়ে গেলে করণীয়
পানির ব্যবহার
ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে, তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে সেই অংশটিকে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে জ্বালা ভাব কমে যাবে। শরীরে যে অংশ পানি দিয়ে ধোওয়া সম্ভব নয়, যেমন মুখের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি কাপড় ভিজিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
পরিষ্কার করুন
পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখা জরুরি। হালকা কোনো সাবান দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে নিতে পারলে, সেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

ময়েশ্চারাইজার বা মলম ব্যবহার
ফার্স্ট ডিগ্রি ক্ষতস্থান শুষ্ক রাখা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ধুয়ে নেওয়ার পর কোনো অর্গানিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। সেকেন্ড ডিগ্রির ক্ষেত্রে ফোস্কা তৈরি হলে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে পারেন। এরপর সেখানে পরিস্কার কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে।
এনএম

