জীবনকে সহজ করতে বিজ্ঞান রোজ কিছু না কিছু আবিষ্কার করেই চলেছে। এই ধরুন বার্তা প্রেরণের বিষয়টি। কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে পাঠানো থেকে এলো ডাকপিয়নের যুগ। তারপর ফ্যাক্স, টেলিফোন আর সর্বশেষ মোবাইল ফোন। দূর প্রান্তে কথা পৌঁছানো এখন তুড়ির ব্যাপার।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করতে নিত্য নতুন জিনিসের আবিষ্কার হচ্ছে। তবে সব আবিষ্কার যে ইচ্ছাকৃত এমনটা কিন্তু নয়। জানলে অবাক হবেন, আমাদের পরিচিত এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা ভুল করে আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেসব জিনিসই পুরো বিশ্বে বিপ্লব এনে দিয়েছে। চলুন এমন পণ্যের কথা জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

মাইক্রোওয়েভ ওভেন
চটজলদি কোনো খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের বিকল্প নেই। জানলে অবাক হবেন, এটিও কিন্তু ভুলে আবিষ্কার হওয়া জিনিসের তালিকায় আছে। ১৯৪৬ সালে পার্সি স্পেনসার একটি ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর তিনি দেখেন যে, তার পকেটে থাকা চকোলেট গলে গিয়েছে। অপ্রত্যাশিত এই বিষয়টি থেকেই প্রথম মাইক্রোওয়েভ ওভেন তৈরি হয়েছিল।
এক্স-রে
এটি এক ধরনের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, যা মেডিক্যাল ইমেজিংয়ে ব্যবহার করা হয়। ১৮৯৫ সালে ক্যাথোড রে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে উইলহেলম কনরাড রয়েন্টজেন এই এক্স-রে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। যা বর্তমান বিশ্বে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

দেশলাই বাক্স
আগুন জ্বালাতে দেশলাই বাক্সের ব্যবহার নিশ্চয়ই করেছেন। এটিও ভুলে আবিষ্কার হয়েছিল। ১৮২৬ সালে একটি নতুন ধরনের এক্সপ্লোসিভ গ্লু তৈরি করার চেষ্টা করতে গিয়ে আচমকাই দেশলাই বাক্স তৈরি করে ফেলেছিলেন জন ওয়াকার। দুর্ঘটনাক্রমে কোনো পৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণ হলে তা জ্বলে ওঠে। সেখান থেকে দেশলাইয়ের বাক্স এসেছে।
ডায়নামাইট
এটি এমন এক ধরনের বিস্ফোরক, যা ১৮৬৬ সালে অল-ফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। তবে ইচ্ছে করে নয়। ঘটনাক্রমে তিনি আবিষ্কার করেন যে, সিলিকার সঙ্গে মিশ্রিত হলে নাইট্রোগ্লিসারিন একটি স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি করতে পারে।

প্লাস্টিক
প্লাস্টিক ছাড়া জীবন অচল। এমনকি বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিকের কমানোর নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ১৯০৭ সালে লিও বেকেল্যান্ড আচমকাই প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছিলেন। আসলে তিনি সিন্থেটিক রাসায়নিক তৈরি করতে যাচ্ছিলেন। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ভুলে প্লাস্টিক আবিষ্কার করে ফেলেন।
পেনিসিলিন
পেনিসিলিন পরিচিত একটি অ্যান্টি বায়োটিক। ১৯২৮ সালে ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করছিলেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। কয়েকটি পাত্রে ব্যাকটেরিয়া রেখে সেগুলোকে টেবিলের এক কোণায় রেখেছিলেন যেন সূর্যের আলো না লাগে। এরপর ছুটিতে যান। ফিরে এসে এই প্লেটে পেনিসিলিয়াম ছত্রাক দেখতে পান। তিনি লক্ষ্য করেন যে এই ছত্রাকটি ব্যাকটেরিয়া জন্মানোকে বাধা দেয়। তারপর এই ছত্রাক থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিনের উদ্ভাবন ঘটে, যা অসংখ্য জীবন রক্ষা করে।

পটেটো চিপস
ছোট-বড় সবার প্রিয় স্ন্যাক্সের তালিকায় আছে পটেটো চিপস। তবে এর আবিষ্কারও হয়েছে ভুলে। ১৮৫৩ সালে নিজের রেস্তোরাঁয় এক গ্রাহককে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন জর্জ ক্রাম। তিনি পাতলা পাতলা করে আলু কেটে তা মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকেন। এভাবে রেসিপির ভুলে আবিষ্কার হয় জনপ্রিয় স্ন্যাক পটেটো চিপস।
কোকা-কোলা
সারা বিশ্বের মানুষ ভালোবাসেন এই সফট ড্রিঙ্ক। ১৮৮৬ সালে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় খোঁজার চেষ্টা করছিলেন জন পেম্বারটন। তিনি কার্বোনেটেড পানির মধ্যে কোকা পাতা আর কোলা বাদাম মিশিয়ে একটি রিফ্রেশিং পানীয় তৈরি করেছিলেন। সেটিই হয়ে যায় কোকা-কোলা।

কর্নফ্লেক্স
সকালের নাশতায় অনেকেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় আছে কর্নফ্লেক্স। ১৮৯৪ সালে স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ বানানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন জন হার্ভে কেলগ। গমের সিরিয়ালের পরিবর্তে ভুট্টা ব্যবহার করেছিলেন তিনি। আকস্মিক এই আবিষ্কারের ফলে তৈরি হয় কর্নফ্লেক্স। যা আজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ভায়াগ্রা
এই ওষুধটি পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নব্বইয়ের দশকে কম অক্সিজেনের মাত্রার জেরে বুকে ব্যথার চিকিৎসা হিসেবে এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেখা যায় ওষুধটি পুরুষদের যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করেছিল।
এনএম

