দলছুট ব্যান্ডের গাওয়া বায়োস্কোপ গানের লাইন ‘হঠাৎ তোমায় মন দিয়েছি/ ফেরত চাইনি কোনো দিন’ কম-বেশি সবাই শুনেছেন। প্রেম-ভালোবাসা সময় মেনে হয় না। কে, কখন, কাকে মন দিয়ে ফেলেন তার কোনো ঠিক থাকে না। কর্মজীবনে দিনের সবচেয়ে বেশি সময় যাদের সঙ্গে কাটানো হয় তারা সহকর্মী। একসঙ্গে কাজ করতে করতেই অনেকে মন লেন-দেনের কাজটি করে থাকেন। কিন্তু সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি আসলে কেমন? এটি কি ভালো নাকি ক্যারিয়ারের জন্য খারাপ?
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করুন বুঝেশুনে। হয়তো তিনি আপনার সঙ্গে হেসে কথা কথা বলছে বলে আপনি ভাবছেন প্রেমে পড়েছে। অথচ এটি তার স্বাভাবিক স্বভাব। তাই প্রেমের আগেই সব নিশ্চিত হয়ে নিন। তার সম্পর্কে ভালো করে জানার পর সম্পর্কে আগান।
বিজ্ঞাপন
কর্মক্ষেত্র আর প্রেম দুইটি শব্দ কিন্তু সাংঘর্ষিক। কাজের জায়গায় প্রেম-ভালোবাসার মতো বিষয়টিকে কোনো কর্মক্ষেত্রই ভালো চোখে দেখে না। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিতেও এমন সম্পর্কের ওপর বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা থাকে। প্রেম করা কোনো অপরাধ নয়। তবে তা যখন কর্ম পরিবেশ নষ্ট করার কারণ হয় তখন তা নিয়ে কড়াকড়ি থাকাটাই স্বাভাবিক।
কথায় বলে, প্রেম মানে না বাধা। তাই সব মানা পাশ কাটিয়ে প্রেম হয়ে যেতেই পারে। সহকর্মীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ালে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলা উচিত।
কর্মক্ষেত্রে পেশাদার থাকুন
কর্মক্ষেত্র কাজের জায়গা। সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হয় নিজের কাজকে। তাই নিজেরা আলাদা যত খুশি সময় কাটান, অফিসে পেশাদার থাকুন। কাজের মধ্যে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক টানা উচিত নয়। আপনার আচরণ যেন সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ না ঘটায় সেদিনে খেয়াল রাখুন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন কাজে প্রভাব না ফেলে। নয়তো অফিসে আপনার ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিজ্ঞাপন
সম্পর্ককে বেশি পাবলিক করবেন না
প্রেমে পড়লে বন্ধু, সহকর্মীর সঙ্গে প্রিয়জনের কথা শেয়ার করতে কে না ভালোবাসেন। কিন্তু সম্পর্কটা যখন সহকর্মীর সঙ্গে তখন তা যত কম পাবলিক করবেন তত মঙ্গল। নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো নিজেদের মধ্যেই রাখুন। গোপনীয়তা বজায় রাখুন। তবে প্রেমের বিষয়টি কখনো গোপন থাকে না। অন্য সহকর্মীদের কাছে গুঞ্জনের বিষয় না হতে চাইলে বিশ্বাসযোগ্য দুই একজনের কাছে সম্পর্কের কথা জানিয়ে রাখুন। নাহয় পরবর্তীতে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে আপনার পক্ষের কাউকেই অফিসে খুঁজে পাবেন না।
মন কষাকষি গোপন রাখুন
ভালোবাসায় রাগ, অভিমান থাকবেই। নিজেদের মন কষাকষির প্রভাব অফিসে পড়তে দেবেন না। সেখানে যে যার কাজ নিয়ম মেনে করুন। কাজের প্রয়োজনে কথা বলার প্রয়োজন হলে তাও বলুন। নিজেদের মান অভিমানের কথা ভুলেও অন্য সহকর্মীর কাছে বলতে যাবেন না। এতে কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কাজের পরিবেশ হারায়।
কাজের সময় চ্যাটিং নয়
দুজন দুজনকে সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখতে পেয়ে বাকিসব ভুলে যাচ্ছেন না তো! ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করছেন না তো? এমনটা হলে কিন্তু কাজের ক্ষতি হবে। মাস শেষে জবাবদিহিতা করতে হবে আপনাকে। এমনকি হারাতে পারেন চাকরিও। অতিরিক্ত চ্যাটিং করলে তা আশেপাশের সহকর্মীদেরও চোখে পড়ে। তাছাড়া অফিসের কম্পিউটারে কিন্তু সব কিছুরই তথ্য সংরক্ষিত থাকে। তাই, সাবধান হোন।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করা যে খুব খারাপ কিছু তা কিন্তু নয়। সম্পর্কের প্রভাব কাজে পড়বে এটিই স্বাভাবিক। কথা হচ্ছে সেই প্রভাব আপনি কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। ইতিবাচক বা নেতিবাচক? ভালোবাসাকে শক্তি মেনে কাজ করে দেখুন। কর্মক্ষেত্রে আপনার উন্নতি নিশ্চিত। প্রেম পাকাপাকি হলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের কাজটা সেরে নিন। সহকর্মীর সঙ্গে বিয়ের কিছু ভালো দিকও রয়েছে।
বোঝাপড়া
দুজন ভিন্ন পেশার মানুষ হলে নিজেদের বুঝতে সময় লাগে। কিন্তু একই পেশার হলে একে অপরকে দ্রুত বুঝতে পারা যায়। এমনকি কাজে সাহায্যও পাওয়া যায়। বাড়তি লাভ হিসেবে ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা, সুপরামর্শ ভাগাভাগি তো আছেই।
একসঙ্গে বেশি সময় থাকা
ভিন্ন পেশায় থাকলে বা আলাদা সময়ে কাজ করলে নিজেদের জন্য খুব সীমিত সময় মেলে। কিন্তু একই অফিসে দুই জন চাকরি করলে একসঙ্গে অনেকখানি সময় থাকা যায়। লাঞ্চ বা টি ব্রেকে টুকটাক কথা বলারও সুযোগ মেলে। দুজন দুজনের চোখের সামনে থাকায় অহেতুক দুশ্চিন্তা বা সন্দেহও সম্পর্কে জায়গা করতে পারে না।
আর্থিক নিরাপত্তা
সংসারের আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই কাজ করতে হয়। একই অফিসে কর্মরত হলে কিংবা একই পেশায় থাকলে নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স, হিসাব ইত্যাদি বুঝতে সুবিধা হয়। সেইসঙ্গে সঞ্চয়ের পরিকল্পনাও করা যায় সহজে।
সমস্যার সমাধান
একই কর্মক্ষেত্রে চাকরি করলে একজন আরেকজনের সমস্যায় পাশে থাকতে পারেন। কারণ প্রতিষ্ঠানের কাজ, নিয়ম এসব দুজনেই জানেন। তাই সমস্যায় পড়লে সঙ্গী সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। মানসিকভাবে ভরসাও দিতে পারেন। দুইজন মিলে দলীয় কাজ করে সেরা কাজ উপহার দিতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানের যেমন উন্নতি হয়, নিজেরাও দক্ষ কর্মী হওয়ার সুযোগ থাকে।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই আছে। ভালোবাসলে তা শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিন। যেন কেউ কাজের ঘাটতির জন্য আপনার সম্পর্কের দিকে আঙুল উঁচাতে না পারে। তবে বিবাহিত সহকর্মীর প্রেমে পড়লে আজই সাবধান হয়ে যান। এমন সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। বরং একটা সময় পর তা আপনার কর্মক্ষেত্র আর ব্যক্তিজীবন- দুই জায়গায়ই কঠিন ঝামেলার কারণ হবে।
এনএম