দাম্পত্য জীবনে সুখে থাকতে কে না চায়? কীভাবে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটানো যায়। এর ফর্মুলা কী? এবিষয়ে প্রশ্ন উঠলে নানা জন নানা কথা বলবেন। মনোবিদদের কেউ কেউ বলেন, সম্পর্ক ভালো রাখতে প্রাণ খুলে কথা বলা জরুরি। আবার কেউ মনে করেন, ঝগড়া করলে, মনে জমা অভিমান ঝেরে ফেললে, ক্ষোভ প্রকাশ করলে দুজন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া দূরত্ব কমতে পারে।
সম্পর্কে ঝগড়া, মান-অভিমান থাকাই স্বাভাবিক। থাকে ভালোবাসাও। তাই বলে কি সবসময় মনের সব কথা শব্দেই প্রকাশ করতে হবে? নাকি মাঝেমধ্যে নীরবতাও অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞাপন

অনেকসময় মনোবিদরা বলেন, বহু কথায় যে কাজ হয় না, হাজার কথাতেও যা বোঝানো যায় না, সেই কাজ করতে পারে নীরবতা। নৈঃশব্দ্যেরও নিজস্ব ভাষা আছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় সেই ভাষার কথাই জানা গেল। ব্রিটেনের দি ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং-এর সমীক্ষা বলছে, দিনের শেষে পরস্পরের সঙ্গে অনর্গল কথা নয় বরং শব্দহীন কাটানো মুহূর্তই বাড়িয়ে দিতে পারে দুজন মানুষের মনের যোগসূত্র।

বিজ্ঞাপন
তবে নীরবতা বলতে রাগ-অভিমান করে কথা বন্ধ করে দেওয়া বোঝানো হয়নি। বরং নিঃশব্দে সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর কথাই বলা হয়েছে। নৈঃশব্দ্য দুই মানুষের সংযোগের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তা জানার জন্য, মনোজগতে তার প্রভাবের আভাস পেতেই করা হয় এই সমীক্ষা।
‘মোটিভেশন অ্যান্ড ইমোশন’ নামে জার্নালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একেবারে চুপ করে একে অন্যের সঙ্গে বসে থেকেও যদি মুহূর্ত উপভোগ করা যায় তাহলে তা একটি সুন্দর-সুস্থ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

অনেকসময় দু’জন মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় কথা। প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে কি স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেবেন? মান-অভিমান না মিটিয়ে নৈঃশব্দ্যের পন্থাকেই বেছে নেবেন? নীরবতা কি তবে সম্পর্ক মজবুত করতে পারে?
সমীক্ষার জন্য বেশ কিছু দম্পতিকে কথা না বলে চুপ থাকতে বলা হয়। এক দলকে বলা হয়েছিল, নীরব থাকার সময় অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে করতে। বিরক্ত হলে যেমন কেউ কথা বলতে চান না, তেমন মানসিকতা থেকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল। আর অন্য একটি দলকে বলা হয়েছিল, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এমন মনোভাব নিয়ে চুপ থাকতে। আরেকটি দলকে নৈঃশব্দ্যে তাদের সঙ্গীর সঙ্গে সময় উপভোগ করতে বলা হয়েছিল।

সমীক্ষকরা দেখেন, রাগ-অভিমান বা তিক্ত কথা স্মরণ করে নীরব থাকায় মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্য দিকে, কোনো তিক্ত মানসিকতা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে নীরব থাকা পরস্পরের মধ্যে সংযোগ বাড়িয়েছে।
দলের মুখ্য সমীক্ষক নেট্টা ওয়েনস্টাইন বলছেন, ‘অসন্তোষ নয়, বরং ভালবাসা, অন্তরঙ্গতার ভাষার কথাই এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে।’ নীরবতায় স্বতঃস্ফূর্ততা থাকা দরকার বলে জানিয়েছেন এই বিজ্ঞানী।

এই সমীক্ষা বলছে, অন্তরঙ্গতা না থাকলেও, অশান্তি ছাড়া দু’জন মানুষের মধ্যে নিঃশব্দে কাটানো সময়ও অর্থবহ, সুম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠতে পারে।
তবে, আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্লডিয়া হ্যাসে অবশ্য এই সমীক্ষার ফলাফলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরব সংযোগই দাম্পত্যে মাধুর্য এনে দিতে পারে। দু’জন একসঙ্গে গান শুনছেন, হাইকিং করছেন, নীরব থেকেও যখন দু’জনেই সেই মুহূর্ত উপভোগ করছেন তখন তাদের মধ্যে ভালোবাসা, বন্ধন দৃঢ় হয়।’

সব মিলিয়ে বলা যায় বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সবসময় দু’টি মানুষের মধ্যে কথার প্রয়োজন হয় না। বরং নৈঃশব্দ্যই অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।
এনএম

