মাথাব্যথা থেকে শুরু করে পেট ব্যথা- বর্তমান জীবনযাত্রায় এই সমস্যাগুলো খুব সাধারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এসব রোগের কারণ হতে পারে। তবে কারো যদি নাভির কাছ থেকে পেটের ব্যথা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা পেটের ডান পাশের নিচের দিকে চলে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ সাবধান হওয়া জরুরি। এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী?
বিজ্ঞাপন
শরীরের একটি ছোট অঙ্গ হলো অ্যাপেন্ডিক্স। এটি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত। যদিও শরীরের জন্য এর বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। তবে এই অঙ্গটিতে কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। যা একজন সুস্থ মানুষকে দীর্ঘকালীন অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে গেলে বা সংক্রামিত হলে তাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন হয়?
মল, জীবাণু, বা অন্যান্য পদার্থ অ্যাপেন্ডিক্সের মুখ বন্ধ করে দিলে অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ দেখা দেয়। এর দলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। এতে প্রদাহ ও সংক্রমণ দেখা দেয়। কখনো কখনো অন্ত্রের প্রদাহ, সংক্রমণ বা ক্যানসারও অ্যাপেন্ডিক্সকে প্রভাবিত করতে পারে। খাবারে ফাইবারের অভাব এবং জিনগত হিস্ট্রি থাকলেও অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের লক্ষণ কী?
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো-
পেটের নিচের ডান অংশে তীব্র ব্যথা। প্রথমে ব্যথা নাভির কাছে অনুভূত হয়। এরপর ধীরে ধীরে তা পেটের নিচের ডান দিকে চলে যায়।
ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।
ক্রমশ বমি, জ্বর, গ্যাস, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
পেটে চাপ পড়লেই তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
পেটে সামান্য ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রতিরোধের উপায়
অ্যাপেন্ডিসাইটিস সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা কঠিন। তবুও কিছু পদক্ষেপ এই সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান
খাদ্যতালিকায় রাখুন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য ইত্যাদি বেশি করে খান। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং অ্যাপেন্ডিক্সে ব্লকেজের ঝুঁকি হ্রাস করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
অ্যাপেন্ডিক্সের আশঙ্কা কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এটি অন্ত্রের গতিশীলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।
পানি পান
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এতে শরীর হাইড্রেট থাকবে।
মনে রাখবেন, সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, এই সমস্যা গুরুতর হতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে এবং সংক্রমণ পুরো পেটেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে বয়স্ক ব্যক্তিদেরও অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা একটাই, তা হলো সার্জারি। সাধারণত অপারেশনের মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হয়। এই অংশটি অপসারণ করলে শরীরের ওপর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে না। তাই ভয়ের কিছু নেই। সঠিক ডায়েট মেনে চলাই যথেষ্ট।
এনএম