প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্ম। এই কালবৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব, পরক্ষণেই রোদের খরতাপ। দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত। একটি ঋতুর সবই কী আর বিষাদময়! যেমন এই গ্রীষ্মেই মন জুড়াতে শাখায় শাখায় ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। ডানা মেলা রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ছড়াচ্ছে আগুনে সৌন্দর্যের ভালোবাসা।
বাংলাদেশের অনন্য প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় সংসদ ভবন। ভবনের ক্রিসেন্ট লেক সংলগ্ন সড়কের দুইধারে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ। তপ্ত গ্রীষ্মে ধূসর নগরে ডানা মেলছে কৃষ্ণচূড়ার ফুল, যেন দূরভেদী কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাসের কাছে ফিকে পৃথিবীর সব রঙ।
বিজ্ঞাপন
সংসদ ভবন এলাকার আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে নগরবাসীর আহ্লাদের সীমা নেই। বেড়াতে এসে কুড়িয়ে পাওয়া কৃষ্ণচূড়ার ফুল প্রিয়তমার কানে গুজে দিচ্ছেন প্রেমিক। এরপর পথের দুইধারে ছাতার মতো মেলে থাকা গাছের নিচে বসে চলছে কুঞ্জন। এ প্রেমে অগুনতি ফুলের অবারিত উচ্ছ্বাস ছড়াচ্ছে ভিন্নমাত্রা।
সংসদ ভবনের পেছনে চন্দ্রিমা উদ্যানসহ গোটা শের-ই বাংলা নগরে কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়ার মতো। তাই ছুটির দিন বা অবসরে শিশু, তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্করাও আসছেন ফুল আর কচি সবুজ পাতার ঐশ্বর্যে। এই সড়কে থাকা কৃষ্ণচূড়ার টানেই তারা প্রতিদিন আসছেন। এই সময়ে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য এই সড়কে মানুষের আনাগোনা বাড়িয়ে দেয়। সড়কটি বেশ চওড়া ও ফাঁকা হওয়ায় মানুষ এখানে একটু শ্বাস নিতে আসেন।
নিসর্গবিদ প্রয়াত দ্বিজেন শর্মা বলে গেছেন, ‘বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না। আর ফুলের বাজারে কিন্তু কৃষ্ণচূড়া বিকোয় না।’ তবে এই ফুল বাজারে না বিকোলেও বাঙালির হৃদয় আর মননে যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
দ্বিজেন শর্মা আরেক জায়গায় লিখেছেন, আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে এই গাছ প্রথমে ইউরোপ, তারপর উপমহাদেশে আসে। সে হিসেবে বাংলা মুলুকে কৃষ্ণচূড়ার আবির্ভাবের বয়স তিনশ’ বছরের মতো।
বিজ্ঞাপন
কৃষ্ণচূড়া গাছ মাঝারি আকারের, মাথার দিকটা এলোমেলো আর ডালগুলো নিচের দিকে নুয়ে থাকে। পাতাগুলো খুবই সুন্দর, বড় একটা ডাটার ডালে চিকন চিকন সব পাতা, দেখতে ঝালরের মতো। শীতে সবগুলো পাতা ঝরে ন্যাড়া গাছে ঝুলতে থাকে কালচে রঙের চ্যাপ্টা ফল। কিন্তু গরমের শুরুতে একপশলা বৃষ্টি হলেই মরা ডালে নতুন পাতার আগমনের আগেই ফুলের কুঁড়িগুলো উঁকি দিতে শুরু করে। তখন গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদ রঙের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছ। দূর থেকে গোটা গাছকেই একটি বিশাল ফুলের তোড়া মনে হয়।
অবসর বা বন্দিদশা পেরিয়ে কৃষ্ণচূড়া দেখতে যাবেন, সেটিরই প্রত্যাশা হয়তো গাছটির। যাওয়ার সময় কবিগুরুর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে বলতে পারেন—
গ্রামের পথে ক্ষণে ক্ষণে ধুলা উড়ায়,
ডাক দিয়ে যায় পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ায়;
এমনি করে বেলা বহে যায়,
এই হাওয়াতে চুপ করে রই একলা জানালায়।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
এজেড

