বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

শৈত্যপ্রবাহ কী, কখন হয়? 

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

শৈত্যপ্রবাহ কী, কখন হয়? 

কয়েকদিন হালকা উষ্ণতা ছড়িয়ে ফের এসেছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতে কাঁপছে দেশবাসী। ভোর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের ওপর দিয়ে বইছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে কয়েক দফায় শৈত্যপ্রবাহ আসে। সাধারণত এসময় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন এটি হয়? জেনে নিন এই প্রতিবেদনে- 

সাধারণত ২৪ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা স্বস্তিদায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত যা চলমান থাকে। যদি জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া এখন তার স্বাভাবিক প্রকৃতি পাল্টে ফেলছে। তাই শীতকালের ধরনেও এসেছে বদল। 


বিজ্ঞাপন


cold-wave1

শৈত্যপ্রবাহ কী? 

শীতকালে তাপমাত্রা কমতে কমতে যখন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায় তখন তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরে নেওয়া হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, সমতল অঞ্চলে সাধারণত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে এবং স্বাভাবিক থেকে তার পার্থক্য ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হলে সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

শৈত্যপ্রবাহের ধরণ

তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে শৈত্যপ্রবাহ চার ধরনের হয়ে থাকে। 

তাপমাত্রা যদি আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রার পারদ যদি চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তাহলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তা অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। 

cold-wave2

শৈত্যপ্রবাহ কখন হয়?

বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শীত থাকে। এসময়ের মধ্যেই শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়। একেকটি শৈত্যপ্রবাহ তিন থেকে সাতদিন, কখনো কখনোবা তার থেকে বেশিও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরতে হলে তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তা যদি কমপক্ষে তিনদিন স্থায়ী না থাকে তাহলে তা শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা যাবে না।  

cold-wave3

শৈত্যপ্রবাহ কেন হয়?

শীতকালে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে অবস্থান করে। আর বাংলাদেশের অবস্থান বিষুব রেখার উত্তরে। এসময় সূর্য দক্ষিণে হেলে থাকে। শীতে দিন ছোট হয় এবং রত বড় হয়।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, সূর্য একবার উত্তর দিকে এবং একবার দক্ষিণ দিকে যায়। সবচেয়ে দক্ষিণে যায় ২১/২২ ডিসেম্বর। সবচেয়ে উত্তরে যায় জুনে। এই মুহূর্তে (শীতকালে) সূর্য একেবারে দক্ষিণ দিকে আছে; অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড বরাবর। সূর্যের তাপে ওই অঞ্চলের বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। ফলে সেখানে যে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে সেটা পূরণের জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বাতাস সেদিকে প্রবাহিত হয়। 

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে সেটা উত্তর দিক থেকে আসছে। আর আমাদের উত্তর দিকে বরফাচ্ছন্ন হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফ শীতল বাতাস বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর হয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড অঞ্চলের ওই শূন্যস্থান বরাবর যাচ্ছে- যুক্ত করেন তিনি। 

cold-wave4

গরমের সময়ও এমন রকম ঘটনা ঘটে। জুন-জুলাই মাসে সূর্যের তাপ উত্তর দিকে বেশি থাকে। ফলে সেখানকার বাতাস গরম হয়ে উপরে ওঠে। এই গরম বাতাস ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হিমালয়ে পৌঁছায়। এসময় বাতাস হিমালয়ে, গারো পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের ওপর বর্ষণ হয়।

অধ্যাপক আইনুন নিশাত জানান, এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে গ্লোবাল সার্কুলেশন বলা হয়। এর ফলেই আমরা কখনো দক্ষিণা বাতাস, আবার কখনও উত্তরের শীতল বাতাস পাই। 

cold-wave5

এই বিশেষজ্ঞের মতে, হিমালয়ের দিক থেকে আসা বাতাসের যে প্রবাহ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণে যাচ্ছে সেটি যদি কোনো প্রাকৃতিক কারণে নিচে নেমে আসে (অনেক কারণে নামতে পারে) তখন তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। 

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাতাসের এই গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশে গড়ে ডিসেম্বর মাসে এক থেকে দুইটি, জানুয়ারি মাসে দুই থেকে তিনটি এবং ফেব্রুয়ারিতে একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়ে থাকে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর