বর্তমানে বিনোদন জগতে রাজত্ব চালাচ্ছে অল্লু অর্জুনের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’। ৩ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল সুপারহিট সিনেমা 'পুষ্পা: দ্য রাইজ'। তারই দ্বিতীয় কিস্তি এটি। সিনেমাটির মূল চরিত্র পুষ্পারাজ। প্রথম অধ্যায়ের মতো এবারও তাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে মূল গল্প। চরিত্রটিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দক্ষিণী তারকা আল্লু।
ছবিটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে রক্তচন্দন কাঠের পাচার নিয়ে। মূল চরিত্র পুষ্পা কীভাবে এই কাঠ পাচার করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে তা ই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরো সিমেমার গল্পে। এই সিনেমা দেখতে গিয়ে সবার মনে একটা প্রশ্ন আসছে। তা হলো লাল চন্দন বা রক্ত চন্দন পাচার করে কীভাবে একজন মানুষ এত অর্থ আয় করতে পারে? কী এমন বিশেষত্ব আছে এই কাঠের?
বিজ্ঞাপন

রক্ত চন্দনকে ‘লাল সোনা’ বলেও অভিহিত করা হয়। কারণ সোনার মতোই মূল্যবান এই গাছ। খুবই বিরল প্রজাতির একটি গাছ রক্ত চন্দন। ‘পুষ্পা; ছবিতে যে জঙ্গল দেখানো হয়েছে, রক্ত চন্দন দক্ষিণ ভারতের শেষাচলম পাহাড়ের ওই ঘন জঙ্গলেই একমাত্র পাওয়া যায়।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়া এই গাছের জন্য অনুকূল। গাছটির উচ্চতা ৮-১২ মিটার হয়।

বিজ্ঞাপন
লাল চন্দন হলো এক ধরনের ‘এনডেমিক স্পিসিস’। ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বলতে এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতিকে বোঝায় যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ এই গাছ ওই অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না।
যেহেতু, প্রাকৃতিকভাবে ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না তাই আন্তর্জাতিক বাজারে রক্ত চন্দনের চাহিদা আকাশছোঁয়া।

মূলত, দুই ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। একটি সাদা, অন্যটি লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনও গন্ধ নেই।
কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণ রয়েছে। যার কারণে বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল এই চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় বিপুল পরিমাণে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সঙ্ঘ (আইইউসিএন) ২০১৮-য় এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে। চোরা কাঠকারবারিদের পাল্লায় এই কাঠ এত বিপুল পরিমাণে কাটা এবং পাচার হয়েছে যে, সারা বিশ্বে আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গাছ অবশিষ্ট রয়েছে।

মূলত, আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়রিয়াসহ বেশকিছু রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ কাজে লাগে। এছাড়াও, মনে করা হয় রক্ত পরিশোধনের গুণ রয়েছে রক্তচন্দন কাঠের। নানা ওষধি গুণ ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। পূজা-অর্চনা এবং বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
রক্তচন্দন থেকে পাওয়া নির্যাস বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল’ পাওয়া যায়। সেটিও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিকভাবে আগুন রোধ করতে সক্ষম। কারণ, রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানো যায় না। পূর্বঘাট এলাকা শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে অনেক সময়েই দাবানলের ঘটনা ঘটে।

এটি একটি দামী কাঠ। আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজারেরও বেশি টাকায় এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়। ভারতে এই গাছ কাটা আইনত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার হয়। পাচার রোধে 'রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স'ও গঠন করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও বর্তমানে ব্যবসায়িক চাহিদা এবং গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক স্তরে, চিন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চিনে। তাই সেই দেশেই সবচে বেশি পাচার হয় রক্ত চন্দন। আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে চিনে এই কাঠের চাহিদা খুব বেশি।
এনএম

