শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পোস্টপার্টাম হেমারেজ: প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২২, ১০:২০ এএম

শেয়ার করুন:

পোস্টপার্টাম হেমারেজ: প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে অন্যতম মূল্যবান অনুভূতি। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে তীব্র কষ্ট সহ্য করেন মা। তবে সন্তান প্রসবের সময়টি বেশ জটিল বলা যায়। এসময় সামান্য রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত নরমাল ডেলিভারির সময় ৫০০মিলিলিটার এবং সিজারিয়ান ডেলিভারির ১০০০ মিলিলিটার রক্তপাত হয়ে থাকে। কিন্তু এই রক্তপাতের মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে তাকে পোস্টপার্টাম হেমারেজ বলা হয়। বাংলায় যার অর্থ প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ। মাতৃত্বকালীন একটি জটিল সমস্যা এটি। যার ফলে মায়ের মৃত্যুও হতে পারে। 

বিশ্বর ১ থেকে ৫ শতাংশ নারীর পোস্টপার্টাম হেমারেজ হয়ে থাকে। সিজারিয়ান ডেলিভারিতে এর আশঙ্কা থাকে বেশি। পোস্টপার্টাম হেমারেজ দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত, প্রসব পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, প্রসব পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর। যা চলতে পারে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত। 


বিজ্ঞাপন


motherজাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, শিশু জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ নারী মারা যান। আর অন্ততপক্ষে সাত মিলিয়ন নারী প্রসব পরবর্তীতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া আরও ৫০ মিলিয়ন নারী প্রসবের পর নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও গর্ভধারণ সংক্রান্ত কারণে মারা যান। এসব জটিলতার মধ্যে পোস্টপার্টাম হেমারেজ অন্যতম। 

কেন হয় এই সমস্যা?

প্রসবের সময় প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভের ফুল বের করার প্রয়োজনে নারীর জরায়ুর মুখ প্রসারিত হয়। প্রসব শেষে যা আবার স্বাভাবিক নিয়মে সংকুচিত হয়ে যায়। এই সংকোচনের ফলে যে স্থানে প্ল্যাসেন্টা ছিল সেখানকার রক্তের ভ্যাসেলগুলোও সংকুচিত হয়। জরায়ু যদি সঠিকভাবে সংকুচিত না হয় তবে তাকে ইউটেরাইন অ্যাটোনি বলে। এই সমস্যার ফলে রক্তপাত হয়ে থাকে। পোস্টপার্টাম হেমারেজের সবচেয়ে সাধারণ কারণ এটি। যদি গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে প্ল্যাসেন্টার ক্ষুদ্র অংশ থেকে যায় তার কারণেও রক্তপাত হতে পারে। 

motherকাদের ঝুঁকি বেশি? 


বিজ্ঞাপন


যেকোনো গর্ভবতী নারীই পোস্টপার্টাম হেমারেজের সম্মুখীন হতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর আশঙ্কা বেশি থাকে। 

জরায়ু অতিরিক্ত প্রসারিত হওয়া- গর্ভে তরলের পরিমাণ বেশি হলে কিংবা গর্ভের সন্তান স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে জরায়ু অতিরিক্ত প্রসারিত হয়। বিশেষ করে শিশুর ওজন যদি ৪০০০ গ্রামের (৮.৮ পাউন্ড) বেশি হয়। 
একসঙ্গে একাধিক সন্তানের জন্ম- গর্ভে একের অধিক প্ল্যাসেন্টা থাকলে 
গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ 
পূর্বে অতিরিক্ত সন্তান জন্মদান 
গর্ভকালীন অতিরিক্ত শ্রম 
সংক্রমণ 
স্থূলতা 
ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ইত্যাদি 

momপোস্টপার্টাম হেমারেজের লক্ষণ

অতিরিক্ত রক্তপাত (প্রতি ঘনটায় নতুন স্যানিটারি প্যাডের প্রয়োজন হচ্ছে এমন) 
ক্লান্তি, অবসাদ, মাথা ঘোরা 
বারবার পেটে ব্যথা অনুভব করা 
হৃদস্পন্দের মাত্রা বেড়ে যাওয়া 
দৃষ্টিশক্তি কমে আসা

এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। 

motherপোস্টপার্টাম হেমারেজ এড়াতে করণীয়

যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রয়েছে তাদের এই সমস্যা হওয়া আশঙ্কা বেশি। এক্ষেত্রে দেহে হিমোগ্লোবিন কম থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রোটিন ও আয়রন বেশি পরিমাণে খেতে হবে।

গর্ভকালীন পুষ্টির অভাবেও এই সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ভালো পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

প্রসব যেন অপ্রশিক্ষিত কারো মাধ্যমে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

motherপ্রতিরোধ ও চিকিৎসা 

বর্তমানে এই সমস্যার হার অনেক কমে এসেছে। ট্রান্সফিউশন ও পেরিপারটিয়াম হিসট্রেকটমি এবং সঠিক সেবার মাধ্যমে এটি রোধ করা সম্ভব। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা সঠিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীকে বাঁচাতে পারেন। তাই এসব ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

একজন মা পৃথিবীতে নতুন একটি জীবন নিয়ে আসেন। তার সুস্থতা নিশ্চিতে সচেতন হওয়া জরুরি। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর