শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পলাতক ধর্ষকের স্কেচ এঁকে আলোচনায় তমাল

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২, ১০:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

পলাতক ধর্ষকের স্কেচ এঁকে আলোচনায় তমাল

২০২০ সালের ঘটনা। দেশে তখন ক্রমশ বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সবাই বাধ্য হয়ে পরছেন মাস্ক। যার সুযোগ জনসাধারণের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরাও নিয়েছিলেন। ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর কদমতলীর মুরাদনগর এলাকায় একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মাস্ক পরা এক যুবককে। মাস্কের কারণে তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এরপর পুলিশ একজন শিল্পীকে দিয়ে সন্দেহভাজন যুবকের স্কেচ আঁকান। সেই স্কেচের ১০০ কপি পোস্টার বানানো হয়। এলাকার বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দেওয়া হয়। পোস্টার দেখে একজন তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। গ্রেফতার করা হয় টুটুল নামের সেই ধর্ষককে। 

যে শিল্পীর করা স্কেচের মাধ্যমে মাস্ক পরা ধর্ষককে চিহ্নিত করা হয়, তিনি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন তমাল। পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্ট। 


বিজ্ঞাপন


tomalরাজশাহীর ছেলে তমাল। সাধারণভাবেই কেটেছে তার ছেলেবেলা। পরিবারের ছোট সন্তান তমালের ছবি আঁকার নেশা খুব কম বয়স থেকেই। প্রিয় মাধ্যম ছিল ঘরের কালো মেঝে। সারাদিন চক দিয়ে মেঝের গায়ে আঁকতেন যা মন চায়। একসময় পরিবারের অন্য সদস্যরা বুঝতে পারলেন, ছবি আঁকার প্রতিভা তার মধ্যে স্রষ্টা প্রদত্ত। তাই তাকে উৎসাহও দিলেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া তমালকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠানে। 

স্কুল, কলেজে বাণিজ্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে আঁকাআঁকিই তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল বেশি। তাই বলে যে ক্লাসে ফেল করতেন তা নয়। কলেজ পার করে নিজের ইচ্ছাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিলেন এই তরুণ। চারুকলায় পড়াশোনা শেষ করেন তমাল। নিজের আঁকাআঁকির বিদ্যাটা এসময় ভালো করে ঝালিয়ে নেন।  

tomalতমাল এখন ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্ট। ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার গল্প জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তিনি বলেন, ‘ছবি আঁকা আমার নেশা ছিল। এ কাজ ছাড়া কিছু ভালো লাগত না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করার পর আয়ের উৎসের প্রয়োজন ছিল। কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিজে কিছু করার চেষ্টাও ছিল। চেয়েছিলাম নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াব। ছবি আঁকা ছাড়া কিছুই ভালো পারি না আমি। আর চাকরির ইচ্ছাও ছিল না। তাই, নিজের পছন্দের বিষয়টিকেই পেশায় রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।’

‘প্রথমদিকে অনেক কষ্ট হয়েছিল। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়তে শুরু করল। তখন কাজের অর্ডার আসতে লাগল। এভাবেই কাজের শুরু। এখন ব্যক্তি পর্যায়ে বা কোম্পানির সঙ্গে- দুইভাবেই কাজ করি।’


বিজ্ঞাপন


tomalছবি আঁকার সব মাধ্যমেই কাজ করেন তমাল। তবে প্রিয় মাধ্যম পেন্সিল রঙ আর পেন্সিল স্কেচ। বেশিরভাগ সময় পোট্রেট বা মানুষের মুখের অবয়ব আঁকেন। ছবি আঁকতে গিয়ে রোজই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা হয়, পরিচয় হয়। নতুন অভিজ্ঞতা জমে স্মৃতির ঝুলিতে। তমালের কাছে এই পেশায় এসে মনে রাখার মতো যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্কেচের মাধ্যমে ধর্ষক খুঁজে বের করা। 

tomalতমাল বলেন, ২০২০ সালে স্কেচের মাধ্যমে ধর্ষক শনাক্ত ও ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি ছিল আমার জীবনের প্রথম কেস। এরপর স্কেচের মাধ্যমে আরও অনেক অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছি। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতাটি এখনও মনে দাগ কেটে আছে।

অগণিত ছবি এঁকেছেন তমাল। তার কিছু পেশাগত কাজে। আবার কিছু ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য। তার সংগ্রহে থাকা প্রতিকৃতির সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে এরই মাঝে। গত বছরের আগস্টে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে একক সর্বোচ্চ প্রতিকৃতি সংগ্রাহক হিসেবে আবেদন করেছেন তমাল। ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন। 

tomalভবিষ্যতে আঁকিয়েদের নিয়ে কাজ করতে চান তমাল। বিশেষ করে যারা চারুকলায় পড়াশোনা করেননি কিন্তু আঁকাআঁকির শখ রয়েছে, ছবি আঁকতে ভালোবাসেন তাদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ। চারুকলায় পড়ার সুযোগ না পেলেও, আঁকাআঁকির নেশা থাকলে বা ইচ্ছা প্রখর হলে যে আঁকিয়ে হওয়া সম্ভব তা তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে প্রমাণ করতে চান। 

এখানেই শেষ নয়, যাদের আঁকাআঁকির শিক্ষা দেবেন তাদের নিয়ে ‘পোট্রেট ক্যাফে’ নামে একটি আর্ট গ্যালারি কাম রেস্টুরেন্ট তৈরির স্বপ্ন দেখেন তমাল। যেখানে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পরিচিত হওয়া যাবে নানারকম ছবির সঙ্গে। চাইলে সেসব কেনাও যাবে। দেওয়া যাবে অর্ডারও। 

tomalমানুষের অনেক ধরনের শখ থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন কিংবা জীবিকার প্রয়োজনে তা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তমাল তা করেননি। ছোট্টবেলার শখকে রূপ দিয়েছেন পেশায়। ২০১৫ সালে বিনা মূলধনে কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার গড় আয় মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিশেষ কোনো অর্ডার থাকলে তা ৫০ এর গণ্ডিও পেরোয় মাঝেমধ্যে। একদিন এদেশের মানুষ পেশা হিসেবে আঁকাআঁকিকে স্বাভাবিকভাবে নেবে এমন স্বপ্ন দেখেন তিনি।

এনএম/এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর