কখনো কখনো জীবন যেন একটি নির্দিষ্ট রেখায় এসে থমকে যায়। মৃত্যুকেই তখন শান্তির আশ্রয় মনে হয়। অবসাদ ভরা মনে কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয়, মৃত্যুতেই সব সুখ আছে। ক্ষণে ক্ষণে কান্না, ঘুমহীন রাত আর চারপাশের সবকিছু অপ্রিয় হয়ে ওঠা— মনখারাপ বা অবসাদের ব্যাপারটিই এমন।
মনের কোণে জমা মেঘ যখন তীব্র হয়ে যায় তখন মানুষ জীবন থেকে পালানোর পথ খোঁজে। ডিপ্রেশনের কারণে বাড়তে থাকে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা। পাশাপাশি এটি আত্মহননের প্রবণতাও বাড়ায়। তবে সবাই যে একই পথ অবলম্বন করেন এমনটা নয়।
বিজ্ঞাপন

অবসাদে ভোগা রোগীর সবকিছুর প্রতিই বিতৃষ্ণা জন্মায়। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে সেগুলোর প্রতিও অবহেলাও প্রকাশ পেতে শুরু করে। অবসাদের এই পর্যায়টিকে বলা হয় মর্বিড ডিপ্রেশন (Morbid Depression) ।
করণীয় কী?
অবসাদ এক ধরনের মানসিক অসুখ। মনের মধ্যে এটি পুষে রাখা মোটেও উচিত নয়। বর্তমানে বাজারে নানারকম ওষুধ এসেছে। পরামর্শ নিয়ে এগুলো খেলে সমস্যা গোড়া থেকেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ভুল করেন। রোগ ফেলে রাখেন। চিকিৎসকের কাছে যান না।
বিজ্ঞাপন

ডিপ্রেশনের রোগীর সুস্থ হওয়ার জন্য পরিবারের সাহায্য জরুরি। তাকে প্রকৃত সং দেওয়া, তার কথা শোনা। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট রোগীর সময় কাটান। তিনি যা ভালোবাসেন তাতে প্রাধান্য দিন। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু ভালো লাগা থেকে যায়। সেটি তার সামনে তুলে ধরুন। ধর্ম, আধ্যাত্মিকতার প্রতি টান থাকলে তাকে ধর্মস্থানে নিয়ে যান। এতে রোগীর মন অনেকটাই ভালো হয়।
রিহ্যাবিলিটেশন জরুরি
অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে মনরোগ বিশেষজ্ঞদের মতো রিহ্যাবিলিটেশন খুবই জরুরি একটি চিকিৎসা। যেসব রোগীরা সবকিছু থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে চায় তাদের আবার ডানা মেলতে শেখায় রিহ্যাব।

বর্তমানে মডার্ন রিহ্যাবে একটি অন্যতম দিক হচ্ছে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করা। অর্থাৎ জীবনযাপনের পরিবর্তন ঘটিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলে তারা। এই রিহ্যাবিলিটেশন পদ্ধতিতে মনের অসুখের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া হয়। তাই বলা যায়, একজনকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করতে তাই রিহ্যাবের গুরুত্ব অপরিসীম। রিহ্যাবের মাধ্যমে সুস্থ করতে ৩-৬ মাস সময় লাগে।
এমন অবসাদ আরও অনেককিছুর কারণ
দীর্ঘদিন একাকীত্বে ভুগলে, মন খুলে কথা বলতে না পারলে ধীরে ধীরে মরবিড ডিপ্রেশন শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর অন্যান্য অসুখগুলোও বাড়তে থাকে। যেকোনো ব্যথা, অস্বস্তি, হার্টে অসুখ যাই থাক না কেন এগুলো প্রতি অবহেলা শুরু করেন রোগী। তখন অবসাদের সঙ্গে শারীরিক নানা অস্বস্তিও প্রকাশ পেতে থাকে।

মৃত্যু আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি আর কী লক্ষণ থাকে?
এই রোগ হলে সারাক্ষণ মনখারাপ লাগে। ভালো কিছু ঘটলেও আনন্দ না পাওয়া, কথায় কথায়- মরে গেলে ভালো হতো- এমন অভিব্যক্তির প্রকাশ করে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই সাবধান হবেন।
কাদের হয়?
নারীরা এই ধরনের অবসাদে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই একটা বয়সের পর মনে কোনো চাপা কষ্ট না রাখাই ভালো। পরিবারের কেউ রোগে আক্রান্ত থাকলে অন্যদেরও হওয়ার প্রবণতা বেশি।

সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়া দরকার
মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, কাউন্সেলিং ও রিহ্যাব— সবকিছুই মনের কষ্ট লাঘবের অন্যতম উপায়। তবে এগুলো তখনই কার্যকর হবে যখন চিকিৎসা শুরু হবে। তাই মন খারাপ কাটিয়ে উঠতে কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। দ্রুত চিকিৎসা নিন। রিহ্যাবের নাম শুনে পিছিয়ে আসবেন না। এটাই হতে পারে মন হালকা করার সঠিক ঠিকানা, সঙ্গে শরীরও থাকে ঝরঝরে।
এনএম

