ঘূর্ণিঝড়। পরিচিত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কয়েক মাস অন্তর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। কিছু অনেক বেশি শক্তিশালী, কিছু কম। এসব ঘূর্ণিঝড়ের সিংহভাগই আঘাত হাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশায়। কখনও কখনও আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এর তাণ্ডবে।
জানেন কি, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর। কিন্তু কেন? এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। চলুন বিস্তারিত জানা যাক-
বিজ্ঞাপন
মূলত বঙ্গোপসাগরের ত্রিভুজ আকৃতি এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হয়ে আসছে বাংলাদেশ ও ভারত। বঙ্গোপসাগরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে যে এটি এক বিস্তীর্ণ জলরাশি, যা জানুয়ারিতে একেবারে শান্ত এবং নীল কিন্তু গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে এটির রূপ একেবারে ভিন্ন। ফুঁসতে থাকা ঘোলা জলের সমুদ্র।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড়: কোন সংকেতে কী বোঝায়?
বঙ্গোপসাগরকে যে তটরেখা ঘিরে রেখেছে, সেখানে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের বসবাস। বিশ্বের ইতিহাসে যতসব ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হেনেছে, তার বেশিরভাগই এই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামের একটি ওয়েবসাইট সম্প্রতি বিশ্বের ৩৫টি সবচেয়ে ভয়ংকর মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকার ২৬টি ঘূর্ণিঝড়েরই উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগরে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নেয় অবতল আকৃতির অগভীর উপসাগরে। মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এরকম জায়গায় সাগরের জলকে ঠেলতে থাকে, তখন ফানেল বা চোঙার মধ্যে তরল যে আচরণ করে, এখানেও তাই ঘটে। সাগরের ফুঁসে উঠা জলরাশি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্রা। এটি পরিস্থিতিকে আরও বিপদজনক করে তোলে। মূলত বঙ্গোপসাগর খুবই উষ্ণ এক সাগর।
পৃথিবীর নানা অঞ্চলে আরও অনেক উপসাগর রয়েছে যেখানে উপকূল বরাবর এমন জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি আছে। যেমন- লুইজিয়ানার গালফ কোস্ট। কিন্তু বিশ্বের যেকোনো উপকূলের চাইতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূল এই ধরনের সার্জ বা জলোচ্ছ্বাসের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। আর উপকূল জুড়ে থাকা ঘনবসতি এই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
বলা হয়, বিশ্বের প্রতি চারজন মানুষের একজন থাকেন বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলোতে।
এনএম