রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানুষ প্রথম আয়নায় মুখ দেখেছিল কবে? 

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪, ১২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মানুষ প্রথম আয়নায় মুখ দেখেছিল কবে? 

‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন/ কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে/ ফুটবে যখন ফুল বকুল শাঁখে/ ভ্রমর যে এসেছিলো জানবে লোকে’— গানের কথা হোক কিংবা নিজেকে দেখা হোক আয়না ছাড়া আমাদের চলেই না। বিশেষ করে নারীদের জীবনে আয়না এক আবেগের নাম। 

ঘর ছোট-বড় যেমনই হোক, একটা আয়না থাকা চাই ই চাই। নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে সাহায্য করে এই বস্তুটি। তবে এর শুরুটা হলো কীভাবে? আপনি কি জানেন মানুষ প্রথম আয়না দেখেছিল কবে? এর সৃষ্টিই বা হয়েছে কীভাবে? 


বিজ্ঞাপন


mirror2

আয়না উদ্ভাবনের ইতিহাস সুপ্রাচীন। আজ থেকে প্রায় আট হাজার বছর আগেই আয়নার ব্যবহার শুরু হয়। জায় এনোশ নামের এক গবেষকের জার্নাল থেকে জানা গেছে, প্রায় আট হাজার বছর আগে বর্তমান তুরস্কে অবসিডিয়ান নামে একধরনের অগ্নিশিলাকে ঘষামাজা করে আয়নার মতো একটা বস্তু তৈরি করা হতো। এতে মুখ দেখা যেত। 

মেসোপটেমীয় ও মিসরীয় সভ্যতাতেও আয়নার প্রচলন ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার থেকে তিন হাজার বছর আগে এই সভ্যতাতে তামার তৈরি একধরনের আয়নার ব্যবহার হতো বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

mirror3


বিজ্ঞাপন


প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডারের লেখা একটি এনসাইক্লোপিডিয়াতে কাচের তৈরি আয়নার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১৮৩৫ সাল নাগাদ আধুনিক সময়ে ব্যবহৃত রৌপ্য আর কাচের সংমিশ্রণে তৈরি আয়না আবিষ্কৃত হয়। 

অর্থাৎ বর্তমানে আমরা যে আয়না ব্যবহার করি সেই রৌপ্য আর কাচের সংমিশ্রণে তৈরি আয়না। ১৮৩৫ সালে জার্মান রসায়নবিদ জাস্টাস ফন লিবিগ এটি আবিষ্কার করেন। তিনি কাচের একটি পাতলা পৃষ্ঠে ধাতব রূপার একটি পাতলা স্তর প্রয়োগ করে একটি কাচ তৈরি করেছিলেন। এই কাচের তৈরি জিনিসে খুব স্পষ্ট করে মুখ দেখা যাচ্ছিল। এভাবেই আয়নার সৃষ্টি।

mirror4

আয়না আবিষ্কারের আগে মানুষ মুখ দেখত কীভাবে? 

এমনটা নয় যে আয়না আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ নিজের মুখ দেখতে পারতো না। তখন মানুষ পানিতে নিজেকে দেখত। অর্থাৎ স্থির পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখার কাজটা করতেন তারা। তবে পানিতে মুখের ছায়া পরিষ্কার দেখা যেত না। 

আয়না ছিল আভিজাত্যের অংশ 

আয়না আবিষ্কার করা হলেও তা সবাই ব্যবহার করতে পারতো না। মেটালিক সিলভার দ্বারা তৈরি আয়না কেবল ধনী ও বড় বাড়ির লোকেরা ব্যবহার করত। ধনী ব্যক্তিরা অর্ডার করে নিজেদের জন্য আয়না তৈরি করাতো। অন্যদিকে দরিদ্র ব্যক্তিরা আগের মতোই পানিকে আয়না হিসাবে ব্যবহার করতো।

mirror5

আয়নায় প্রথম মুখ দেখেছিলেন কে? 

১৮৩৫ সালে যে আয়না তৈরি করা হয়েছিল তাতে মুখমণ্ডল স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে দেখা যাচ্ছিল। প্রথম আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলেন যে ব্যক্তি তার নাম তেবেলে। তিনি একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ ছিল।

তেবেলের পরে দ্বিতীয় যে ব্যক্তি আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলেন তিনি ছিলেন গোষ্ঠীর প্রধান। তার নাম ছিল পুয়া। আয়নায় মুখ দেখার পর পুয়া আনন্দে পাগল হয়ে গেছিলেন। আয়নায় তাকিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরণের অঙ্গি-ভঙ্গি করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পুয়া আয়নাকে গোষ্ঠীর জন্য বিপজ্জনক বস্তু মনে করেছিলেন। একারণে তিনি আয়না ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন।

mirror6

আয়নাকে ভাবা হতো জাদুকরি 

প্রাচীনকালে মানুষ আয়নাকে জাদুকরী জিনিস বলে মনে করতেন। তারা ভাবতেন, আয়নার সাহায্যে তারা তাদের দেবতা, দেবী ও পূর্বপুরুষদের যোগাযোগ করতে পারে। তাই সেই যুগের মানুষ মুখ দেখার জন্য নয় বরং তাদের দেবতা ও পূর্বপুরুষদের সাথে দেখা করার জন্য আয়না ব্যবহার করতেন। 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আয়না ব্যবহার করতে শিখে গেলেও দরিদ্র শ্রেণির কাছে আয়না দীর্ঘকাল অস্পৃশ্যই ছিল। বিভিন্ন মানুষ ও গোত্রের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আয়না হয়ে ওঠে ধনী-দরিদ্র সবার প্রতিবিম্ব দেখার বস্তু।  

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর