শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দীর্ঘ কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে মা হওয়া এক নারীর গল্প

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২২, ০৯:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

দীর্ঘ কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে মা হওয়া এক নারীর গল্প

একজন নারীর জীবনে অন্যতম সুখের ও তৃপ্তির মুহূর্ত মা হওয়া। তবে সন্তান জন্মদানের বিষয়টি অত সোজা নয়। অনেক বাধা পার করে, অনেক ত্যাগের বিনিময়েই একজন নারী মা হন। কেউবা মা হওয়ার জন্য দীর্ঘ কষ্টের পথ পাড়ি দেন। এমনই একজন নারী তৃপ্তি সেন। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান মাতৃত্বের গল্প। তার মা হওয়ার গল্প হতে পারে মন খারাপের কারণ। কিংবা কারো জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণা। 

তৃপ্তি বলেন, ‘আমার ঠাকুমা বলতেন, মা হওয়া মুখের কথা না। নিজের জীবনে সে কথার বাস্তব প্রমাণ পেয়েছি। অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে আমি মা হয়েছি। এখন আমি সৌভাগ্যের মা। যে সন্তান আমার জীবনের সৌভাগ্য।’


বিজ্ঞাপন


কম বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তৃপ্তি। সংসারজীবনের শুরুর দিকে তাই সন্তান নেননি। সেসময় মা হওয়ার চেয়ে লেখাপড়ার দিকে ঝোঁক ছিল বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভেবেছিলেন সব ঠিকঠাকই থাকবে। কিন্তু সংগ্রামের শুরু যেন সেখানেই। 

maশারীরিক জটিলতার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে গর্ভধারণ করতে চাইলেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন তৃপ্তি। ঢাকার সব ডাক্তারের অলিগলি ঘোরা হয়েছিল। তবুও কোনো সমাধানের উপায় মিলছিল না। একবার ভারত গিয়ে চিকিৎসা অবশ্য করিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে নিয়মিত না হওয়ায় ফলাফল শূন্য। আবার বাংলাদেশে চেষ্টা শুরু হলো। 

সমাজ কি আর এত কিছু বোঝে? আকারে ইঙ্গিতে ঠিকই তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন মা হতে না পারা যেন তার জীবনের ব্যর্থতা। মানসিক আর সামাজিক উভয় দিক থেকেই তৃপ্তির অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল। 

তৃপ্তি বলেন, ‘একদিকে পড়াশোনা শেষ কিন্তু চাকরি মিলছিল না। অন্যদিকে, শত চেষ্টার পরও গর্ভধারণ করতে পারছিলাম না। মানসিক যন্ত্রণা কাবু করে ফেলে আমাকে। একটি সন্তানের চিন্তায় আমি এতই বিমর্ষ ছিলাম যে ক্যারিয়ারে মন দিতে পারছিলাম না। সবাইকে বলতাম, আমার সন্তান আর চাকরি দুটো একসঙ্গেই হবে।’ 


বিজ্ঞাপন


maমরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে ডায়াবেটিস ধরা পড়ল তৃপ্তির। তবুও থেমে যাননি তিনি। গর্ভধারণের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। একবার চিন্তা করেছিলেন টেস্টটিউব বেবি নেবেন। কিন্তু মন থেকে সায় মিলছিল না।

ভারতের একটি ইনফার্টিলিটি সেন্টারেও যোগাযোগ করেছিলেন তৃপ্তি। তাদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে মনের ভয় আরও গাঢ় হলো তার। টানা চার ঘণ্টা কেঁদেছিলেন সেখানে। তবে কী সন্তানের মুখ আর দেখা হবে না? মা হওয়ার তৃপ্তি কি কখনো পাবেন না তৃপ্তি? 

এরপর তার কাঠফাটা রোদের জীবনে এক চিলতে মেঘ হয়ে দেখা দেন একজন চিকিৎসক। এলাকার এক পরিচিতি নারীর সৌজন্যের তার কাছে যান তৃপ্তি। পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চেকআপ শেষে ডাক্তার জানালেন, কোনো সমস্যা নেই। ঈশ্বর চাইলে তিনি মা হতে পারবেন। 

তৃপ্তি বলেন, ‘এই একজন মাত্র ব্যক্তি আমাকে অভয় দিলেন যে আমার সব ঠিক আছে। সব ঠিক হবে। তারপর উনার তত্ত্বাবধানে ছয়মাসের মধ্যে ঈশ্বর আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছিলেন।’

maযে মাসে তৃপ্তি গর্ভধারণ করেন, সেই মাসেই তার বর্তমান চাকরিটি হয়। অনেকেই বলেছিল চাকরি ছেড়ে দিতে। তবে তৃপ্তি চাচ্ছিলেন না। যেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তৃপ্তি তখন ছিলেন, তিনি জানান চাকরি ছাড়তে হবে না। সন্তান জন্মদানের আগের দিন পর্যন্তও অফিস করতে পারবেন তিনি। 

সত্যিই তা করেন তৃপ্তি। উত্তরা থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ৯ মাস কাজ করেন প্রতিদিন এসে। সন্তান জন্মের তিনদিন আগেও তিনি অফিস করেছিলেন। 

এরপর তৃপ্তির জীবনে আসে সেই শুভ মুহূর্ত। ছেলে সন্তানের জননী হন তৃপ্তি। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমার ছেলের নাম রেখেছিল সৌভাগ্য। ওর জন্মের পর আমার পৃথিবী বদলে যেতে শুরু করেছে। বহু কষ্ট, ত্যাগের বিনিময়েই মা হওয়া যায় তা অনুভব করেছি তখন।’

বর্তমানে সন্তান আর চাকরি দুটোই সমানতালে সামলাচ্ছেন তৃপ্তি। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর