শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ গন্তব্য যখন সিলেট

ডি.এইচ.মান্না
প্রকাশিত: ০২ মে ২০২২, ০৮:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ গন্তব্য যখন সিলেট

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। সময়-সুযোগের অভাবে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও অনেকেরই ভ্রমণে যাওয়া হয় না। বলা হয়ে থাকে, ভ্রমণ জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভ্রমণ উপাদেয়। এই ঈদের ছুটিতে আপনার ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে সিলেট। 

তুলনামূলক কম খরচে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এবারের ছুটি কাটান হযরত শাহজালাল, শাহপরান ও ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতিবিজড়িত করিম-হাছন, আরকুম আর রাধারমণের জন্মস্থান পূণ্যভূমি সিলেটে।


বিজ্ঞাপন


tourসিলেট যারা ভ্রমণ করতে আসেন তাদের বেশির ভাগেরই প্রথম ইচ্ছে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করা। তাহলে এই ঈদে তাদের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সূচনা হোক আপনার সিলেট ভ্রমণ। 

ইট-পাথরের যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে হারিয়ে যান খানিক দূরে জল-ঝর্ণার  মিতালীতে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেনো আপন হাতজুড়ে সাজিয়েছে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো। সিলেটের প্রকৃতির রূপের রাণীখ্যাত জাফলং, পাথর স্পর্শ করে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশির বিছনাকান্দি, পাহাড়ের বুক চিড়ে খেলা করা ‌'মিনি নায়াগ্রা' খ্যাত ঝর্ণা পান্থুমাই, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল। 

পা মাড়িয়ে আসুন শীতল পাটির চা বাগানের সবুজ গালিচায়। উঁচু-নিচু পাহাড়ের সরু পথ ধরে পাহাড়-টিলার পাদদেশ ঘুরে মন জুড়াবে যে কারোরই। নয়তো, নীল নদ খ্যাত লালাখাল কিংবা মিনি কক্সবাজার উপাধি পাওয়া হাকালুকির অথৈ জলরাশি মনকে করবে আন্দোলিত। 

tourট্রেনে কিংবা বাসে আসুন শহরে, প্রবেশদ্বারেই সুরমার বুকে দেখতে পাবেন শতবর্ষী লোহার তৈরি ক্বীন ব্রিজ। ক্বীন ব্রিজের উত্তরপারে স্বাগত জানাবে আলী আমজদের ঘড়ি ও সার্কিট হাউস। 


বিজ্ঞাপন


পর্যটন নগরী খ্যাত সিলেটে চোখ যে দিকে যাবে সেদিকেই আপনার মনে হবে এ যেন নয়নাভিরাম এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সিলেটের অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্যের মধ্যে আরও আছে-চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, পান্থুমাই  সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের এক সম্ভার সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।

tour

লাক্কারতুরা চা বাগানে যেভাবে যাবেন

সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট  থেকে বিমানবন্দর রোডে যে কোন ধরনের যানবাহনে চড়ে লাক্কারতুরা চা বাগানে আসা যায়। চাইলে সিলেট শহর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করেও এখানে ঘুরতে আসা যায়। 

জাফলং কীভাবে যাবেন?

জাফলং সিলেট থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সিলেট থেকে বাস বা মাইক্রোবাস অথবা সিএনজি করে যেতে পারেন জাফলংয়ে। জাফলং যাওয়ার বাস ভাড়া জনপ্রতি ৯০ টাকা পড়বে এবং গেইটলক বিরতিহীন বাস ভাড়া ১০০ টাকা।

tourআবার রিজার্ভ গাড়িতে যেতে চাইলে সিলেটের বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে মাইক্রোবাস, সিএনজি বা লেগুনা পাওয়া যাবে। যাওয়া-আসার জন্য মাইক্রোবাসের ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা। লেগুনা ভাড়া লাগবে ২০০০-২৫০০ টাকা। সিএনজি ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। লেগুনায় ১০ জন করে, সিএনজিতে ৫ জন করে আর মাইক্রোবাসে আসন অনুযায়ী বসে যেতে পারেন।

রাতারগুল যাওয়ার উপায়

সিলেট থেকে দুইভাবে রাতারগুল যাওয়া যায়। সিলেট শহরের পাশের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে খুব অল্প সময়ে রাতারগুল পৌঁছানো যায়। এই পথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ যেতে হয়। সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। তাই সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা অটোরিকশার ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে। সারাদিন সিএনজি ভাড়া নিলে একই ভাড়ায় বিছনাকান্দিও ঘুরে আসতে পারবেন। 

যদি সিলেটের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি চড়ে যেতে চান তবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জলাবনে ঢোকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৬ জন চড়া যায়। এমন একটি নৌকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ ও নৌকা ভাড়া করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। রাতারগুলে লাইফ জ্যাকেট, ছাতা এবং মাঝির হ্যাট ভাড়া পাওয়া যায়।

tourরাতারগুল যাওয়ার দ্বিতীয় পথটি হচ্ছে সিলেট হতে জাফলংগামী গাড়িতে গিয়ে সারিঘাট নামতে হবে। সিলেট থেকে সারিঘাট আসার ভাড়া নেবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সারিঘাট হতে সিএনজিতে করে গোয়াইনঘাট বাজারে এসে নৌকা দিয়ে রাতারগুল যেতে হবে। আর ১০-১২ জনের জন্য একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে এ পথে খরচ এবং সময় বেশি লাগে।

এছাড়া সিলেটের বন্দর বাজার পয়েন্ট থেকে সিএনজি যোগে সাহেব বাজার হয়ে মটরঘাট পৌঁছে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে রাতারগুল জলাবনে চলে যেতে পারবেন।

মনে রাখা জরুরি যে পথেই রাতারগুল আসেন না কেন, বনের ভেতরে ঢুকতে গেলে জেলেদের ছোট নৌকা লাগবে।

লালাখাল কীভাবে যাবেন ?

সিলেট থেকে লালাখালের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। সিলেট শহর থেকে লালাখালে যেতে হলে প্রথমে নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানে বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রোবাস বা জাফলংগামী বাসে চড়ে আপনাকে সারিঘাটে যেতে হবে। সারিঘাটে যেতে খরচ হবে ৪০-৬০ টাকা।

সারিঘাট থেকে লালাখালে দুই পথে যাওয়া যায়-পানি পথে ও সড়ক পথে। সড়ক পথে যেতে হলে সারিঘাট ব্রিজ পার হয়ে উত্তর দিকে মসজিদ থেকে একটু এগিয়ে ডান দিকে লালাখালের রাস্তা পাওয়া যাবে। সেখানে দেখবেন সারি সারি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। এসব অটোরিকশা দিয়ে আপনি লালাখাল পৌঁছে যাবেন। অটোরিকশায় জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়া নেয়।

lalakhalআর পানি পথে যেতে চাইলে সারিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বা স্পিডবোটে যেতে পারেন। নৌকায় যেতে হলে ১২০০-১৫০০ টাকা খরচ হবে আর স্পিডবোটে গেলে ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হবে।

লালাখালের নীল, নীলচে সবুজ ও আকাশি নীল রঙের জলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন। এখানের রঙিন ছাউনি নৌকা ভাড়া করতে লাগবে ৫০০-৭০০ টাকা। আর ছাউনি বিহীন নৌকা ৩০০-৪০০ টাকায় ইচ্ছেমত সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারেন।

হাকালুকি হাওর যাওয়ার উপায়

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে বাস, সিএনজি অথবা লেগুনা করে মাইজগাঁও বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে পুনরায় সিএনজি যোগে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে গেলেই হাকালুকি হাওর ভ্রমণ করা যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার মত খরচ হবে।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর দেখতে যাবেন যেভাবে

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। দেশের যেখান থেকেই ভোলাগঞ্জ যেতে চান আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেটের আম্বরখানা থেকে সাদাপাথর পরিবহনে করে নৌকা ঘাট পর্যন্ত যাওয়া যায় এবং বিআরটিসি বাস, বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরে। 

বিছনাকান্দি কীভাবে যাবেন?

সিলেটের ওসমানী শিশু পার্কের সামনে কিংবা আম্বরখানার সামনে থেকে গোয়াইনঘাটগামী-সিএনজি, লেগুনা ও অটোরিক্সা পাওয়া যায়। ভাড়া ৯০- ১৩০ টাকা।

bisnakandiতারপর গোয়াইনঘাট থেকে হাদারপার বাজার পর্যন্ত যেতে হবে সিএনজি কিংবা অটোরিক্সা করে। এতে ভাড়া নেবে ৪০-৬০ টাকা। এরপর হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে বিছনাকান্দিতে।

পান্থুমাই  যাওয়ার উপায়

সিলেট থেকে পান্থুমাই যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপার পর্যন্ত গেলে ভালো হয়। হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। হাদারপার বাজারেই বিছনাকান্দি/পান্থুমাই যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়।

এই ঈদের ছুটি উপভোগ করতে চলে আসুন প্রকৃতি কন্যা সিলেট দেখতে। ঈদের অবকাশ যাপনে পর্যটনে সিলেট হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দের জায়গা।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর