স্বভাবজাতভাবে নারীরা কিছুটা আবেগী হয়ে থাকেন। রাগ, অভিমান কিংবা দুঃখ অনুভূতি যাই হোক একসময় কেঁদে ফেলেন বেশিরভাগ নারী। এই কান্নার সুফল বা কুফল নিয়ে কি কখনো ভেবেছেন? নারীর কান্না কি পরিস্থিতি শান্ত করতে পারে?
নতুন এক গবেষণা বলছে, নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ কমাতে পারে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবকে। চলুন এই গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-
বিজ্ঞাপন
গবেষকরা বলছেন, নারীর কান্নার ঘ্রাণে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাব কমে যায় অন্তত ৪৪ শতাংশ। পিএলওএস বায়োলজি এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, পুরুষের মস্তিষ্কের যে অংশটি তাকে আক্রমণাত্মক করে তোলে, তা দুর্বল করে দেয় নারীর কান্নার ঘ্রাণ।
এখানেই শেষ নয়। মানুষ কেন কাঁদে, তার একটি ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো হয়েছে এই গবেষণায়। এতে বলা হয়, সম্ভবত পরিস্থিতিকে শান্ত করার একটি জৈবিক কৌশল এটি।
সামাজিকতার ইঙ্গিত অশ্রুতে
বিজ্ঞাপন
স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের জলে যে রাসায়নিক থাকে, তা সামাজিক সংকেত হিসেবে কাজ করে। এর প্রভাব খুব প্রখর। বিজ্ঞানীরা দেখেন, পুরুষ ইঁদুরের অশ্রুতে এমন একটি রাসায়নিক থাকে, যা নারী ইঁদুরকে যৌনতার প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা ইঁদুরের গর্ভপাতও হতে পারে অশ্রুর কারণে। অবশ্য, বাবা ইঁদুরের অশ্রুতে এমনটা ঘটবে না।
ইঁদুরের অশ্রু প্রভাবিত করে আগ্রাসী আচরণকেও। অন্ধ নারী ইঁদুরেরা নিজেদের পুরুষের আগ্রাসী আচরণ থেকে রক্ষায় কান্নার আশ্রয় নেয়। আর নারী ইঁদুরের কান্নায় এমন রাসায়নিক থাকে, যা পুরুষ ইঁদুরের লড়াই থামিয়ে দেয়। অন্যদিকে শিশু ইঁদুরের কাছে আত্মরক্ষার একমাত্র সম্বল কান্না।
ইঁদুরের ক্ষেত্রে কান্নার এত প্রভাব থাকলেও মানুষের কান্না কতটা প্রভাব রাখতে পারে, তা স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণার গবেষকরা আগে দেখিয়েছিলেন, পুরুষ যখন আবেগ আক্রান্ত নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকে তখন তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমে আসে।
আবেগীয় অশ্রুতে রাগ কমে ৪৪ শতাংশ
এই গবেষণাটির মূল লক্ষ্য ছিল পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে কান্নার ক্ষমতা কী তা পরীক্ষা করা। ছয় জন নারীর কাছ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা। অশ্রু সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কৌশল নেওয়া হয়। ওই ছয় নারীর সঙ্গী পুরুষদের একটি ভিডিয়ো গেম খেলতে দেওয়া হয়, যা তাদের আগ্রাসী মনোভাবকে আর উসকে দেয়। ওইসময় পুরুষরা ভিডিয়ো গেমটি খেলছিলেন একটি এমআরআই স্ক্যানারের মাধ্যমে। এই স্ক্যানার দিয়ে তাদের ব্রেইনের কার্যকলাপগুলো মাপছিলেন গবেষকরা।
দেখা গেছে, নারীদের কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের আগ্রাসী আচরণ কমে গেছে ৪৩.৭ শতাংশ। ব্রেইন ইমেজিং পরীক্ষায় দেখা গেছে, কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত ব্রেইনের অংশটিও তার কার্যকলাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
এক বিবৃতিতে গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইজম্যান'স ব্রেইন সায়েন্সেস ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞানী হোয়াম সোবেল বলেন, ‘আমরা খেয়াল করেছি, অশ্রু মস্তিষ্কের ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর আগ্রাসন সম্পর্কিত অংশটিকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে। এতে উল্লেখযোগ্যভাবে আগ্রাসী আচরণ বা রাগ কমে আসে।’
আগ্রাসনের লৈঙ্গিক ফারাক
মানুষের রাগী আচরণে লিঙ্গ ও যৌনতা কতটা প্রভাব রাখতে পারে, সেটিও এই গবেষণায় ফুটে উঠেছে। ২০১৫ সালের সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক এনসাইক্লোপেডিয়ায় বলা হয়েছে, লিঙ্গ পার্থক্য মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রাচীনতম আবিষ্কারের একটি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকলে টেস্টোস্টেরন কমে। আর টেস্টোস্টেরন কমে গেলে তা নারীর তুলনায় পুরুষের আগ্রাসী আচরণের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।
এই প্রভাবের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে নারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চান গবেষকরা। যেন গবেষণাটি আরও প্রসারিত হয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এনএম