রোববার, ১২ মে, ২০২৪, ঢাকা

উদ্যোক্তার গল্প

৩০০ টাকায় শুরু, বর্তমানে ২টি ব্যবসা সামলাচ্ছেন মিতাশা 

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

entrepreneur

জীবনে সফল হতে চাইলে লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকতে হয়। এমনটাই বলেন গুণীজনেরা। পথ চলা শুরু করেন অনেকে। কেউ মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন। কেউবা লেগে থাকেন। সফলতা দ্বিতীয় দলের ব্যক্তিদের হাতেই ধরা দেয়। 

কুমিল্লার মেয়ে মিতাশা রহমান খান। বর্তমানে যার পরিচয় উদ্যোক্তা। কীভাবে কাজের সূচনা, কেমন ছিল প্রতিকূলতা, বর্তমানেই বা কেমন যাচ্ছে দিনকাল? সবকিছু নিয়ে কিছুটা সময় আড্ডা হয় তার সঙ্গে। প্রথমেই জানতে চাই ছেলেবেলার কথা। 


বিজ্ঞাপন


কুমিল্লা বোর্ড থেকে এসএসসি আর এইচএসসির পাঠ চুকিয়েছেন মিতাশা। এরপর ঢাকা ইডেন কলেজের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে শেষ করেন অনার্স, মাস্টার্স। ছেলেবেলা থেকেই ঘুরতে ভালোবাসতেন মিতাশা। তাই ভাবতেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবেন। তাহলে স্বামীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। 

যেই ভাবা সেই কাজ। এইচএসসির পর সত্যিই বিয়ের পিঁড়িতে বসে যান তিনি। পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু হয় নতুন এক জীবনের। তবে তখন উপলব্ধি করতে পারেন, যেমনটা মানুষ চায়, তেমনটা হয় না বাস্তবে। 


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায় এলেন কীভাবে? জানতে চাই মিতাশার কাছে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর ঢাকায় এসে ইডেন কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। ফাস্ট ইয়ারে পড়াকালীন মনে হলো পড়াশোনার পাশাপাশি আলাদাভাবে কিছু করা দরকার। মূলত এই চিন্তা থেকেই ২০১৫ সালে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা।’

‘বিবাহিত হওয়ার কারণে বাসার বাইরে থেকে জব করা সম্ভব না। অন্যদিকে আমার ছোট বাচ্চা ছিল। তাই অনলাইনকেই কাজের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলাম।’ —যোগ করেন মিতাশা।

মিতাশার উদ্যোগের নাম ‘হিজাব শপ অনলাইন স্টোর’। হিজাবী মেয়ে তিনি। যেহেতু হিজাব নিয়ে তার ধারণা ছিল তাই এই পণ্যকেই বেছে নেন কাজের জন্য। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান থেকে হিজাব কিনে পেজে সেল পোস্ট দিতেন। 

মিতাশা বলেন, ‘তারপর ইউটিউব দেখে হিজাব এক্সেসোরিজ বানানো শিখলাম। ৩০০ টাকা সর্বপ্রথম ইনভেস্ট করে কিছু হিজাবের পিন বানালাম এবং সেগুলোর সেল পোস্ট দিলাম পেজে। সেই পিনগুলোর অনেক বেশি রেসপন্স পেয়েছিলাম পরবর্তীতে। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যবসা আগায়। ২০১৫ সাল থেকে কাজ শুরু হলেও মাঝখান দিয়ে আবার থেমে গিয়েছিলাম। এক বছরের মতো গ্যাপ দিয়ে আবার যাত্রা শুরু করি ২০১৭ সালে। এরপর থেকে নিয়মিত কাজ করছি।’ 

এই নারী উদ্যোক্তার মূল পণ্য হিজাব ও হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষঙ্গ। এছাড়া বর্তমানে তার উদ্যোগে দেশি-বিদেশী পোশাক ও বিভিন্ন পণ্য যুক্ত হয়েছে। 

করোনার পর আরেকটি নতুন পেজের মাধ্যমে দেশীয় বিভিন্ন প্রকার সিজনাল খাবার বিক্রি করছেন মিতাশা। এই অনলাইন প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ফ্রেশ এন্ড হেলদি’। বর্তমানে একসঙ্গে দুটো ব্যবসাই সামলাচ্ছেন তিনি। খাবারের প্রতিষ্ঠানে রসমালাই, দইয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্য যেমন আছে তেমনি রয়েছে ঘি, মাখনের মতো পণ্যগুলো। এছাড়াও ফ্রোজেন ফুড পাওয়া যায় এখানে। 

মিতাশা জানালেন, খাবারের প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে তার এবং তার স্বামীর। একটি এগ্রো প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন এই দম্পতি। গত দুই বছর ধরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। ভবিষ্যতে এই প্রজেক্ট থেকে ভালো ফলন হলে বিদেশি জাতের ফলগুলো দেশের মানুষের কাছে সুলভমূল্যে পৌঁছে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। বর্তমানে মিতাশার বাগানে চাষ হচ্ছে বিদেশি জাতের লেবু, প্যাশন ফ্রুট, ড্রাগন ফল ইত্যাদি। 

আফ্রিকান ননী ফলও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তারা। এই ফলটি ক্যানসারসহ ১৫০টি রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এখনও সেভাবে ফলটি চাষ করা হয় না। তাই মিতাশা দম্পতি চান সফলভাবে চাষ করে এই ফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে। 

মাত্র ৩০০ টাকা মূলধনে কাজ শুরু করেছিলেন মিতাশা। বর্তমানে মাসে ২৫-৩০ হাজার আয় করেন তিনি। অন্যদের চেয়ে কেন নিজেকে ভিন্ন করেন? জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমি যেসময় শুরু করেছিলাম সেসময় অনলাইন বিজনেসের প্রচলন অত বেশি ছিল না খুব কম নারীই এরকম ঘরে বসে ব্যবসা করতেন। আমার মূল লক্ষ্য ছিল কাজে সততা আর পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে ভালো মানের পণ্য সুলভ মূল্যে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া’।  

পরিবারের কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন? জানতে চাই তার কাছে। মিতাশা বলেন, ‘শুরুর দিকে পরিবারের সহযোগিতা বা সাপোর্ট তেমনটা না পেলেও বর্তমানে সবার কাছ থেকে ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি। না হলে এতটা বছর আমার কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারতাম না।’

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছে ঝোঁকের বসে কাজ শুরু করেন। কী নিয়ে কাজ করবে সেটা বুঝেন না। না বুঝে অন্যের দেখাদেখি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। তাই তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো যে, তারা যে বিষয়ে ভালো জ্ঞান আছে অথবা যে পণ্য সম্পর্কে তাদের ভালো ধারণা আছে সে এরকম পণ্য নিয়ে যেন কাজ শুরু করেন। একজন একটা পণ্য বিক্রি করে লাখ টাকা ইনকাম করছে বলে যে আপনিও একই পণ্য বিক্রি করে লাখ টাকা ইনকাম করবেন এরকম চিন্তা মাথায় রেখে কাজ শুরু করলে কখনোই ভালো করতে পারবেন না।’

নিজের পরিশ্রমের মূল্যও পেয়েছেন মিতাশা। জিতেছেন নানা পুরষ্কার। ২০১৯ সালে স্বাধীনতা সংসদ থেকে জিতেছিলেন নারী উদ্যোক্তা পুরষ্কার। ২০২১ সালে বাংলাদেশের সব থেকে বড় দেশীয় পণ্যের নারী উদ্যোক্তা গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকে পেয়েছেন জয়ী অ্যাওয়ার্ড। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই তার কাছে। মিতাশা বলেন, ‘ইচ্ছা আছে নিজের উদ্যোগকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। একদিন যেন বাংলাদেশ নয় বাংলাদেশের বাহিরেও আমার এই উদ্যোগটা সাথে সবাই পরিচিতি লাভ করতে পারে।’

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর