রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখে বন্ধুত্ব যেমন

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখে বন্ধুত্ব যেমন

পড়ন্ত বিকেলে কিংবা অবসর সময়ে ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গেলে যে মুখগুলো সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে তারাই ‘বন্ধু’। ছেলেবেলা বলা হোক, কিংবা মেয়েবেলা— জীবনের প্রাথমিক দিক থেকে শুরু করে বড়বেলা অব্দি খেলার সাথে, পথ চলার সাথে থাকে বন্ধু। জীবনের এক অদ্ভুত বন্ধনের নাম তাই ‘বন্ধুত্ব’। 

জন্মের পর শিশুর পৃথিবী থাকে পরিবারকে ঘিরেই। সেই গণ্ডি পেরিয়ে হঠাৎ পদার্পণ করা হয় হয় নতুন জগতে। আর এই সময়টায় হাত ধরে পাশে থাকে বন্ধু। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সবসময় পাশে থাকা মানুষগুলো আমাদের বন্ধু। যাদের তুলনা কেবল তারাই। 


বিজ্ঞাপন


friend

বন্ধুত্বের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কবি তার কবিতা-গানে সাহিত্য দিয়ে তুলে ধরেছেন বন্ধুত্বের নানা বাঁক। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কী রবি ঠাকুরের কাছে? প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে কবি কোনটিকে এগিয়ে রেখেছেন? 

‘বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকী। বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল।’ —বন্ধুত্বের এমন সহজ সংজ্ঞা রবি ঠাকুরের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। পোশাকের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বুঝিয়ে দিলেন বন্ধুত্বের নেই কোনো জাত-শ্রেণী ভেদাভেদ। 

friend


বিজ্ঞাপন


বন্ধুত্বে ভালোবাসা আছে, আবেগ আছে। তবে কি প্রেম আর বন্ধুত্ব এক? মনের মধ্যে হাজারবার উঁকি দেওয়া এই প্রশ্নের জবাবও কাব্যিক ছন্দে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগত। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর, প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগত নাই। দুই জনেই দুই জনের জগত।’

সহজ কথায় ব্যাখ্যা বললে বলা যায় দুজন মানুষ যখন এক হয়ে জগতে বাঁচে, দুজন মিলে কাজ করে তখন সেই সম্পর্ককে বন্ধুত্ব বলে। অন্যদিকে প্রেমের ক্ষেত্রে দুজন মানুষ এমন এক সম্পর্কে থাকে যেখানে একজন আরেকজনের জগতের মতো। 

friend

বন্ধুত্ব সম্পর্কে কবি গুরুর ধারণাই হয়তো সঠিক। বন্ধু তো সে’ই যে সহযোগী হয়ে থাকে নিজের একটি সুন্দর জগত সৃষ্টিতে। বন্ধু কারা? এ প্রশ্নের জবাবও মেলে রবির ভাষায়। তার মতে- ‘গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ।’

এই বিশেষ জাতের মানুষগুলোকে জীবনে কেমনভাবে চাই আমরা? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখনীতে সে প্রশ্নেরও উত্তর দেন। তার ভাষায়, ‘বন্ধু আমাদেরই মতো দোষে গুণে জড়িত মর্ত্যের মানুষ হইয়া থাক এই আমাদের আবশ্যক। আমাদের ডান হাতে বাম হাতে বন্ধুত্ব। আমরা বন্ধুর নিকট হইতে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।’ 

আসলেই কি তা নয়? জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পরিস্থিতিতে আমরা বন্ধুকে পাশে চাই। ভরসা হয়ে, সাহস হয়ে আমাদের পথ চলার সঙ্গী হবে এমনটাই কামনা করি। 

friend

বন্ধু আর বন্ধুত্ব নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। তাই ইতিও টানতে চাই রবি ঠাকুরের ভাষায়। বিশ্বকবি বলেছেন- ‘প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।’

সবমিলিয়ে বলা যায়, প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে একধাপ এগিয়েই থাকে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুটির সঙ্গে প্রেমও হতে পারে। তবে বন্ধুত্বহীন প্রেম কল্পনা করা চলে না। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর