মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ চোখ। দুচোখের দৃষ্টিতেই এই বিশ্ব দেখি আমরা। চোখের নানা সমস্যার মধ্যে ঝাপসা দেখা অন্যতম। এমনটা হলে কারো মুখের দিকে তাকালে মনে হয় মুখ কালো আর ঝাপসা। আবার টিউবলাইটের দিকে তাকালে মনে হয় লাইটের মাঝখানে গর্ত রয়েছে। কেন এমন হয়? চোখে ঝাপসা দেখার পেছনে কি রেটিনার সমস্যা দায়ী? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
রেটিনা কী?
বিজ্ঞাপন
রেটিনা হলো চোখের সবচেয়ে ভিতরের স্তর। এর প্রকৃতি হালকা সংবেদনশীল। আমরা যখন কোনো বস্তু দেখি তখন আলোকরশ্মি আমাদের চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে যায় এবং রেটিনার ওপর পড়ে। ফলে আমরা বস্তুটি দেখতে পাই।

রেটিনার সমস্যার কারণে কি চোখে ঝাপসা দেখে?
হ্যাঁ, রেটিনার সমস্যার কারণে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে। মূলত রেটিনার ম্যাকুলায় ছিদ্র হলে দৃষ্টিজনিত এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনটা হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া উচিত। দেরি হলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞাপন
কেন রেটিনার সমস্যা হয়?
বিভিন্ন কারণে রেটিনার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো-
মানসিক চাপ
ঘুমের অভাব
বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন
ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা

মোটা দাগে এসব কারণে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্মব্যস্ততা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তার প্রভাব পড়ে ঘুমের ওপর। অন্যদিকে মানসিক চাপ বাড়লেই রক্তে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এই হরমোনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে, যার প্রভাবে চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রেটিন্যাল ডিজেনারেশন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চোখের সমস্যাও বাড়ে। ফলে ঝাপসা হয় দৃষ্টি। এমনই একটি সমস্যা রেটিন্যাল ডিজেনারেশন। ডিজেনারেশন অর্থ ক্ষয়। বর্তমানে মানুষের শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যা বেড়েছে। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
তবে এই ক্ষয় হলেই যে অন্ধত্ব নিশ্চিত, তা কিন্তু নয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়।

ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা
অন্যদিকে ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা মূলত ডায়াবেটিক রোগীদের হয়। আবার মানসিক চাপ থেকেও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই এই স্বাস্থ্যসমস্যা থেকে বাঁচতে চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে।
রেটিনার সমস্যা এড়াতে করণীয়
অবশ্যই মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। এজন্য নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম, যোগাসন, ধ্যান করতে পারেন। পড়াশোনা কিংবা অফিসের কাজের বাইরেও এমন কাজে মন দিন যা আপনার করতে ভালো লাগে। পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটান, ঘুরতে যান।

বেশি রাত জাগবেন না। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুমানোর আগে সব ধরনের ইলেকট্রিক ভিভাইস দূরে রাখুন।
বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করাতেই হবে। কেননা একমাত্র পরীক্ষা করালেই চোখের অসুখ ধরা পড়ে। আর যত দ্রুত রোগ ধরা পড়বে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে।

এছাড়াও নজর রাখুন খাদ্যাভ্যাসে। বেশি করে মৌসুমি ফল, শাকসবজি, লিন প্রোটিন আর শস্যজাতীয় খাবার খেতে হবে। ছাড়তে হবে ধূমপানের স্বভাব।
এনএম

