শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোন মেডিকেল টেস্টের অর্থ কী?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৩, ০৭:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

কোন মেডিকেল টেস্টের অর্থ কী?

শারীরিক অসুস্থতায় আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। একজন রোগী শারীরিক জটিলতার বর্ণনা শুনে চিকিৎসক সম্ভাব্য কিছু মেডিকেল টেস্ট করতে দেন। এসব টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যম রোগ ও রোগের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা এবং শারীরিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। অনেকসময় প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকরা সাংকেতিক ভাষায় মেডিকেল টেস্ট দিয়ে থাকেন। এসবের পূর্ণ রূপ অনেকেই জানেন না। কোন টেস্টের অর্থ কী সেটিও বেশিরভাগ মানুষের অজানা। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে-  


বিজ্ঞাপন


test

CBC: Complete blood count 

সিবিসি হলো একটি রক্ত পরীক্ষা। এটি রক্তের বিভিন্ন উপাদান যেমন লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং প্লেটলেটের পরিমাণ পরিমাপ করে। যেসব কারণে এই টেস্ট দেওয়া হয়- 

১। শরীরে রক্তের পরিমাণ জানার জন্য
২। জ্বর হলে, কেন জ্বর হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য
৩। রক্তের ঘাটতি থাকলে সেটি আয়রন বা ভিটামিনের অভাবে কিনা সেসম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য
৪। শরীরের ভিতরে এলার্জি কেমন তার ধারণা পেতে (S. IgE নামক টেস্টও দেওয়া হয়)
৫। প্রদাহ বা ইনফেকশনের অবস্থা বোঝার জন্য
৬। রক্ত জমাট বাধানোর উপাদানের পরিমাণ কেমন তা জানার জন্য (যেমন ডেঙ্গু হলে রক্তের Platelet কমে যায় অর্থাৎ রক্তপাত হবার প্রবণতা বেড়ে যায়) 
৭। ব্লাড ক্যানসার হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য 


বিজ্ঞাপন


test

Urine RME

এটি প্রস্রাবের পরীক্ষা। কোষ, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটিন, চিনি এবং অন্যান্য পদার্থের মতো বিভিন্ন উপাদানের জন্য প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা এই টেস্টে। সাধারণত মূত্রতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করতে এই পরীক্ষাটি করা হয়। প্রস্রাবের এই পরীক্ষার মধ্যে যেসব বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়- 

১। ইনফেকশনের অবস্থা জানা যায় 
২। গ্লুকোজ বা সুগারের (ডায়াবেটিস) মাত্রা জানা যায় 
৩। প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যায় কিনা (কিডনিতে কোন সমস্যা থাকলে)
৪। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায় কিনা
৫। কিডনিতে ক্যানসার বা পাথর রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে জানা যায়

test

Serum Creatinine

যেসব রোগ কিডনি সঙ্গে জড়িত সেসব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা দেওয়া হয়। প্রেশার বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি বাধ্যতামূলক টেস্ট। ব্যথার ওষুধ বা পেইন কিলার দেয়ার আগেও এই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। 

Lipid Profile

রক্তে চর্বির পরিমাণ জানার জন্য চিকিৎসক এই টেস্ট দিয়ে থাকেন। লিপিড প্রোফাইল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টেস্ট। কেননা, রক্তে চর্বি বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, লিভার ড্যামেজ কিংবা প্যান্ড্রিয়াটাইটিস এর মতো মারণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের হাই প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও এই টেস্ট করানো উচিৎ।

test

RBS: Random blood sugar

আরবিএস রক্তের পরীক্ষা। ডায়াবেটিস আছে কিনা সেই ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা (আদর্শ টেস্ট হলো FBS আর HbA1C%)। একজন হাই প্রেশারের রোগীর প্রতি বছর যেসব টেস্ট করা উচিত সেগুলা হলো-

• CBC/Urine RE/S.
• Creatinine/ECG/Lipid Profile সহ চোখটাও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। কেননা ডায়াবেটিস ও হাই প্রেশার হচ্ছে নীরব ঘাতক, এরা মস্তিষ্ক/হৃদপিন্ড/হাত-পা/কিডনি এইসবের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে মরণ ডেকে আনতে পারে।

Serum Uric Acid, CRP

বাত ব্যথার রোগীদের জন্য সিরাম ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট দেওয়া হয়। যেমন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকলে গেটে বাত হতে পারে। SLE বাদে বেশিরভাগ বাত ব্যথাতেই CRP বাড়ে। 

test

S. Bilurubin

কোন রোগীর জন্ডিসের কী অবস্থা সে সম্পর্কে জানার জন্য এই টেস্ট করা হয়। 

Serum TSH/T3/T4

শরীরের ঠিকমতো কাজ করার জন্য হরমোন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি উপাদান এদিক ওদিক হলে ঝামেলা শুরু হয়। থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করার জন্য এই টেস্টগুলো করতে দেওয়া হয়। অনেকের গরম সহ্য হয় না, হাত পা অনবরত ঘামে, বুক ধড়ফড় করে। আবার অনেকের ঠান্ডা সহ্য হয় না, গরমের দিনেও গরম লাগে না তেমন, শরীর ফুলে যায়। এসব সমস্যা হলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে থাইরয়েড টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। 

থায়রয়েডের সমস্যা বা গলা ফোলা দেখার জন্যও এই টেস্টগুলো করা হয়।

Serum Electrolyte

আমাদের রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বি-কার্বোনেটের মতো কিছু উপকারি উপাদান। এগুলোর পরিমাণ যদি ঠিকমতো না থাকে তাহলে সমস্যা দেখা যায়। এসব উপাদান ঠিক আছে কিনা তা জানার জন্য সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট টেস্ট করা হয়। শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিচুনি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকলে এই টেস্ট করানো উচিত। অনেক বেশি বমি বা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষাটি করানো উচিত। 

BT/CT (bleeding time/Clotting time)

BT এবং CT পরীক্ষা হলো ল্যাবরেটরি পরীক্ষা যা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা নির্ণয় করে। বিটি পরীক্ষার সময়, একটি রক্তচাপের কাফ বাহুতে স্ফীত হয় এবং একটি ল্যানসেট দিয়ে একটি ছোট খোঁচা ক্ষত তৈরি করা হয়। ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ করার সময় পরিমাপ করা হয়। অন্যদিকে সিটি পরীক্ষায়, একটি রক্তের নমুনা একটি অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ধারণকারী একটি টেস্ট টিউবে সংগ্রহ করা হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে কতটা সময় লাগে তা পরিমাপ করা হয়। উভয় পরীক্ষাই সহজ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য এবং সাধারণত ক্লিনিকাল অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়।

test

ECG 

কোন ব্যক্তির হৃদপিণ্ডে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা তার প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য এই মেডিকেল টেস্ট করা হয়। বুকে দীর্ঘদিন ব্যথা থাকলে এই টেস্টটি করানো উচিত। ইসিজি পরীক্ষা হার্টের ছন্দ, হার এবং বৈদ্যুতিক পরিবাহী ব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে। যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয়ে ইসিজি পরীক্ষা করা হয়- 

১। অ্যারিথমিয়াস- হার্টের অস্বাভাবিক ছন্দ যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, ব্র্যাডিকার্ডিয়া বা টাকাইকার্ডিয়া
২। হার্ট অ্যাটাক- রক্ত প্রবাহের অভাবের কারণে হার্টের পেশীর ক্ষতি
৩। হার্টের ভালভ রোগ- এমন একটি অবস্থা যেখানে হার্টের ভালভ সঠিকভাবে কাজ করে না
৪। জন্মগত হৃদরোগ- জন্মের সময় উপস্থিত হার্টের ত্রুটি
৫। অন্যান্য হার্টের অবস্থা- যেমন পেরিকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং আরও অনেক কিছু

ইসিজি পরীক্ষা একটি নিরাপদ ও ব্যথাহীন পরীক্ষা যা সম্পাদন করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। 

Serum Testesterone, S. FSH, S. LH, S. Prolactin 

কোন ব্যক্তির যৌন রোগ থাকলে কিংবা বন্ধ্যাত্ব হলে অথবা নারীর দেখে অতিরিক্ত লোম বা গোঁফ দেখা দিলে, মাসিকে সমস্যা থাকলে সাধারণত এই টেস্টগুলো দেওয়া হয়ে থাকে।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর