বাবা আমার সবচেয়ে ভরসার জায়গা। আমাকে দেখলেই আব্বু বলে দিতে পারবেন আমার কী হয়েছে। আমি কী পছন্দ করি, কী অপছন্দ করি সব আব্বু জানেন। আব্বুর সাথে কথা বলতে না পারলে মেন্টাল ট্রমাতে পড়ে যাই। আব্বু মসজিদে একটা বক্স পেলে এখনো আমার জন্য নিয়ে আসেন। মনে হয়, আমি বড় হইনি। আব্বুকে নিয়ে বলা কখনো শেষ হবে না। চা করে দেওয়া, আমার পড়ালেখা, ড্রেসআপের খেয়াল রাখা- সব ছোটবেলা থেকে আব্বু করেন।
বিরক্তি, সুখ সবকিছুর অন্তিম স্থান আমার বাবা। এত ধৈর্য দিয়ে মানুষটা আবৃত, এত দূরদর্শী, এত ঠান্ডা মস্তিষ্ক আল্লাহ আর কাউকে দিয়েছেন কি না জানি না। আমি একটু খকখক করে কাশি দিলেই ওষুধ হাজির। নিজে শত যন্ত্রণাতেও ওষুধ নিবেন না। অথচ সবসময় খেয়াল রাখেন যেন আমার কোনো ঘাটতি না হয়।
বিজ্ঞাপন
সেদিন মেডিকেলে আব্বুর পাশে বসেছিলাম, মোবাইলের স্ক্রিনে বারবার দেখছিলাম বাবা ঝিমুচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম বাবা বৃদ্ধ হচ্ছে, বয়স ফুরিয়ে আসছে। একদিন হয়তো আমি, নয়তো বাবা টুক করে চলে যাব। কী যে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি! বাবা বৃদ্ধ হচ্ছে বিষয়টা আমি নিতে পারছি না।
১৫-২০ দিনের জন্য উমরাহতে গিয়েছেন। প্রতিটি সেকেন্ড আমি মিস করেছি বাবাকে। বারবার মনে হচ্ছিল আব্বু হারিয়ে যাবে। আব্বুকে আর পাব না আমি। আর আম্মি বলে ডাকবে না আমাকে। পরক্ষণই আব্বুর কল, ‘আম্মু কেমন আছো তুমি?’ আহ শান্তি! শত কষ্টে যখন থাকি তখন যদি আব্বু শুধু একবার ডাকে তাতেই আমার শান্তি। এটাই কি ঘরে ঘরে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক? আমার জানা নেই।
কত হাসি কত কান্নার কাহিনী আছে। প্রিন্সেস লাইফ পাওয়া আমি বাবাকে কষ্ট ছাড়া আর কী দিতে পেরেছি আমার জানা নেই। আব্বু, আমি জানি না তুমি কখনো জানবে কি না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি তোমার জন্য বেঁচে আছি। তুমি না থাকলে কবেই নিজেকে শেষ করে দিতাম। আব্বু তুমি ভালো থেকো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা। তোমার চুপ করে থাকা আমাকে কষ্ট দেয়। আমাকে সারাদিন বকা দেবে, আদর করবে, শাসন করবে তুমি।
জানি না বাবার জন্য জীবনে কিছু করতে পেরেছি কি না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি সবসময়, আল্লাহ যেন আব্বুকে নেক হায়াত দেয়, সুস্থ রাখে, আমার আগে নিয়ে না যায়। বাপটা ছাড়া আমাকে দেখে রাখার মতন কেউ নাই। অসহায় হয়ে যাব আমি।
বিজ্ঞাপন
লেখক: শিক্ষার্থী, স্নাতক শেষ বর্ষ, চট্টগ্রাম
এনএম

