সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাবা সব জানে, সব পারে

তোর্ষা পূর্বাহ্ন
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৩, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

বাবা সব জানে, সব পারে

আমাদের দুই বোনের জগতে আমাদের বাবা সুপারহিরো। বাবা সব জানে, সব পারে! আমাদের বাবা আমাদের সবাইকে সামলায়। ধীর, স্থির আর বিচক্ষণ মানুষ আমাদের বাবা।

২০১৮ সালে আমার টন্সিল অপারেশন হয়। এরপর আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিছু খেতে পারতাম না। খেলেই কান্না করতাম। আমার বাবা অনেক ধৈর্য নিয়ে আমাকে খাওয়াতেন। আমার কষ্ট দেখে কেঁদে দিতেন। আমি নাকি দুই দিন বয়স থেকেই বাবার বুকে ঘুমাই! আমার জন্মের পর মা খুব অসুস্থ হয়ে যান। মা যেন ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন তাই বাবা সারারাত জেগে থাকতেন আমাকে নিয়ে। রাখতেন বুকে।


বিজ্ঞাপন


২০২১ সালে আমি ভয়াবহ অসুস্থ হই। ১৪ দিন হাসপাতালে ছিলাম। বাবা একদিকে অফিস সামলায় আরেকদিকে আমাকে সামলায়। আমার অসুস্থতায় মা যেন ভেঙে না পড়েন, ছোট বোন যেন কষ্ট না পান, সবদিকে খেয়াল রেখেছেন।

father

বাবার সঙ্গে আমার অনেক মিল। আমার মা তো আমার মধ্যে কিছু একটু ভালো দেখলেই বলে, তুই একদম তোর বাবার মতো করেছিস!

বাবা আমাকে শেখান মাকে কীভাবে আগলে রাখতে হয়, বোনকে কিভাবে সাপোর্ট দিতে হয়। যেকোনো জটিল কিছু বাবার সাথে আমি আলাপ করি। তিনি আমাদের বড় বন্ধু। এই নতুন দেশে এসে বাবা সবসময় চেষ্টা করে যান যেন আমরা ভালো থাকি। খুব পরিশ্রম করেন আমাদের সুখের জন্য।


বিজ্ঞাপন


আমাদের বাবা খুব ভালো রাঁধেন। ছুটির দিন মানেই বাবার হাতে তৈরি সকালের নাশতা খাওয়ার দিন। ঘুম পাগল বাবা ছুটির দিনে ঘুম বাদ দিয়ে আমাদের জন্য নাশতা বানান। বাবার হাতের ডেজার্ট সবচেয়ে সেরা। যে খেয়েছে সেই প্রশংসা করেছে।

পরীক্ষার সময় বাবা আমাকে খাইয়ে দেন। আমরা যেন সব ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকি তার জন্য বাবা খুব যত্ন নেন। আমাদের আদরে আগলে রাখেন।

father

মাঝে মাঝে বাবা চিন্তিত থাকলেও আমাদের বুঝতে দেন না। একা একা সামাল দেন। আমাদের সবসময় সেফটি আর সিকিউরিটির মধ্যে রাখার চেষ্টা করেন।

আমরা বাসার সব কাজ নিজেরাই হাতে হাতে করে ফেলি। বাবা শিখিয়েছেন কোনো কাজ ফেলে রাখতে নেই। কীভাবে কাজ করলে পরিবারের সদস্যদের সবার চাপ কমবে সেভাবে করি আমরা।

বাবার প্রতিভার যেন অন্ত নেই। কী দারুণ কবিতা আবৃত্তি করেন! অবসর পেলেই গল্প নিয়ে বসে পড়েন। আমরা সবাই একসঙ্গে সিনেমা দেখি। আর বাবা আমাদের নিয়ে প্রচুর ঘুরেন। ঘুরতে পছন্দ করেন তিনি। আমরাও পছন্দ করি বাবার সঙ্গ।

আর পছন্দ করেন সারপ্রাইজ দিতে। আমাদের জন্মদিন মানেই আমরা তীব্র উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করি বাবা কী সারপ্রাইজ দেবেন।

father

বাবা শিখিয়েছেন কোনো কাজ ছোট না, কোনো মানুষ ছোট না। কাউকে নিয়ে কটু কথা বলতে হয় না। অপচয় করা পছন্দ করেন না। মিতব্যয়ী হওয়াকে পছন্দ করেন।

আমার ছোট বোন ছবি আঁকতে পছন্দ করে। ওর আঁকার আগ্রহ যেন আরও বাড়ে তাই বাবার কত চেষ্টা! আমি বই পড়তে পছন্দ করি, BTS কে ভালোবাসি। বাবা খুঁজে খুঁজে অ্যালবাম, পোস্টার আর কত বই আনেন আমাদের জন্য।

আমাদের বাবা ছোট থেকেই অনেক পরিশ্রম করেছেন। ভালো কিছু করতে অনেক স্ট্রাগল করেছেন। ভেঙে পড়লেও কখনো পিছু হটেননি। আবার উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়েছেন। বাবাকে দেখেই তাই শিখি কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

বাবা খুব করে বোঝান আমাদের, যেন মাথা উঁচু করে চলি। কারো যেন ক্ষতি না করি। নিজের স্বপ্ন যেন পূরণ করি। জীবনটা অনেক সুন্দর পাশে সুপারহিরো বাবা আছেন বলে।

আমাদের বাবা সুস্থ থাকুন, এমন সুপারহিরো হয়ে আমাদের আগলে রাখুন সারাজীবন। আমরা আমাদের বাবাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। বাবার থেকে পাওয়া শিক্ষা নিজের জীবনে কাজে লাগাতে চাই সবসময়।

লেখক: শিক্ষার্থী ও কানাডা প্রবাসী (বয়স ১৩ বছর)

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর