মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারাবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২৩, ০৯:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারাবে’

সারাদেশে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছিলেন। ওই রুলের ওপর শুনানিতে আদালত বলেছেন, প্রেসক্রিপশনে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক লেখা হয়, তাতে অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন।

এছাড়াও ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট (ম্যাটস্‌) প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পাবেন কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত। তখন আদালত এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


ভুয়া ডাক্তারের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের সাজাসহ যথাযথ জরিমানার বিধান চেয়ে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুলের সংশোধন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি হয়। মঙ্গলবার (৬ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলীর চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন এবং আদেশ দেন।

এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান।

এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী জে আর খান রবিন সাংবাদিকদের জানান, ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সাজা বাড়ানোর বিষয়ে এবং ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লেখার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশানে জারি করা রুলের মডিফিকেশান (সংশোধন) চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে আদালত এটি নথিভুক্ত করে রাখেন এবং রুল শুনানির সময় ওই আবেদনটিও শুনবেন মর্মে জানান।

তখন আদালত বলেন, রোগীর ব্যবস্থাপত্রে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, তাতে অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। ম্যাটসগণ ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন কি না? তা কোনো এক্সপার্ট কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলেও জানান আদালত। সঙ্গে সঙ্গে রুলটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন।


বিজ্ঞাপন


এর আগে সারাদেশে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।

২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জে আর খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ওইদিন আইনজীবী জে আর খান রবিন বলেন, এ বিষয়ে একটি রুলও জারি করেছেন আদালত। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর দুটি ধারা সংশোধন করে দেশের ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইন বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বিএমডিসির মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য মহাপরিদর্শক, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে ভুয়া ডাক্তারের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের সাজাসহ যথাযথ জরিমানার বিধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন।

আবেদনে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া ডাক্তারের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া ডাক্তারের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বাড়ানোর জন্য কেন সুপারিশ করা হবে না, সে মর্মেও রুল চাওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও রেজিস্ট্রার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

আবেদনকারী আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডাক্তারদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেকে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি শারীরিকভাবে স্থায়ী অক্ষমতাসহ অনেকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে।

এআইএম/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর