শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

আফতাবনগরে গরুর হাটের ইজারা স্থগিতই থাকছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৩, ০৭:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

আফতাবনগরে গরুর হাটের ইজারা স্থগিতই থাকছে

আফতাবনগরে গরুর হাট না বসানোর বিষয়ে ইজারার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ইজারদার কর্তৃপক্ষের করা আপিলের বিষয়ে শুনানির জন্যে আগামী ১২ জুন ঠিক করেছেন আপিল বিভগের চেম্বার জজ আদালত। তবে, এ বিষয়ে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল থাকল।

বুধবার (৩১ মে) ইজারদার কর্তৃপক্ষের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের আদালত এ আদেশ দেন।


বিজ্ঞাপন


আদালতে আজ আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অপরদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. মো. ইউনুছ আলী আকন্দ।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ মে হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মাদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রাজধানীর আফতাবনগরে গরুর হাট না বসানোর বিষয়ে দেওয়া ইজারার কার্যক্রম স্থগিত করে রায় দেন। ওইদিন থেকে সাত দিনের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আফতাব নগরস্থ ব্লক-‘বি’ থেকে ‘এইচ’ পর্যন্ত খালি জায়গা (বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ) ইজারা দেওয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।

গত ২২ মে এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মাদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।


বিজ্ঞাপন


আদেশের বিষয়টি ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ড. মো. ইউনুছ আলী আকন্দ।

এর আগে গত ১৫ মে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর আফতাবনগরে গরুর হাট না বসানোর নির্দেশনা চেয়ে এই রিট আবেদন করা হয়। রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান ভূমি অফিসার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন হাউজিং ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডা ইস্টার্ণ হাউজিং আফতাব নগরিস্থিত ব্লক-‘বি’ থেকে ‘এইচ’ পর্যন্ত খালী জায়গা বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ। আফতাব নগরসহ উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন সাতটি স্থানে বাজারের কোরবানির গরু বিক্রির জন্য বাজার ইজারার আহ্বান করেছে।

গত ২ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (স্থানীয় সরকার বিভাগ) পক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সাহে আলম সই করা সম্পত্তি বিভাগ এই ইজারা/বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র ঘোষণা করেন। দরপত্রে ঈদুল আজহার দিনসহ ৫ দিন গরুর হাটের কথা উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৫ ও ১৬ মে সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি হয়। এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির পর আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত দরপত্রের বাক্স ও খাম খোলার পর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে শিডিউল দেওয়া হবে।

আফতাবনগরে গরুর হাট না বসানোর বিষয়ে রিটের আগে সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে বাসিন্দাদের পক্ষে শেখ মাহমুদ উজ্জ্বল আবেদন করেন। যেখানে বলা হয়, জহিরুল ইসলাম সিটিতে (আফতাবনগর) বসবাসরত লোকজন পবিত্র কোরবানি ঈদের আগে ও পরে প্রায় এক মাস উষ্ণ অস্থায়ী হাট স্থাপনের কারণে ব্যাপকভাবে মানবেতর জীবনযাপন করেন। যেহেতু চলাচলের প্রধান সড়কের ওপর অস্থায়ী গরু-ছাগলের হাট বসে, (আফতাবনগর) এখানে বসবাসরত নাগরিকগণের যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

আবেদনে আরও বলা হয়, এই সময়ে কোনো লোক অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করানোও সম্ভব হয়ে উঠে না। পাশাপাশি কোনো লোক মারা গেলেও তার লাশ বহন করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এছাড়াও গরু-ছাগলের হাট বসানোর কারণে আবাসিক এলাকাটির বসবাসের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেই সঙ্গে গরু-ছাগলের নানাবিধ বর্জ্যে এলাকাটির পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়।

এছাড়াও প্রধান সড়কটি ও জহিরুল ইসলাম সিটি (আফতাবনগর) ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সারাবছরই প্রধান সড়কটিতে খানাখন্দ থাকায় জহিরুল ইসলাম সিটিতে (আফতাবনগর) বসবাসরত সকল নাগরিকদের যাতায়াতে ব্যাপক অসুবিধা পোহাতে হয়। পাশাপাশি নিম্নবর্ণিত কারণসমূহের জন্যে অত্র আবাসিক এলাকায় গরু ছাগলের হাট বসানো সমীচীন নয়।
 
১. রাজউক অনুমোদন মোতাবেক আফতাবনগর একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা।
 
২. গরু-ছাগলের হাটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়।
 
৩. গরু-ছাগলের হাটের কারণে এলাকাবাসীর যাতায়াতে ভোগান্তি ও অসুবিধা হয়।
 
৪. ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ও সোসাইটি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সড়কে যে সকল বৈদ্যুতিক লাইন ও বাতি লাগানো হয়েছে হাটের সময় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব বাতি লাগানোর জন্য এ সকল লাইন নষ্ট করে দেয় এবং বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ে যায়।
 
৫. গরুর হাটের জন্যে ওয়াসার অনুমোদন ছাড়া কয়েকশ’ পানির লাইন অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া হয়। যা পরে ঠিকমতো না লাগানোর কারণে সারাবছর এলাকাবাসীর ময়লা পানি ব্যবহার করতে হয়। ওয়াসার বক্তব্য গরুর হাট বন্ধ না হলে এলাকাবাসী সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হবে।
 
৬. গরুর হাটের কারণে কয়েকশ’ কাঁচা টয়লেট স্থাপন করা হয়, যা পরবর্তীতে সঠিকভাবে অপসারণ করা হয় না।
 
৭. গরুর হাটের কারণে সকল রাস্তা ঘাট নষ্ট হয়ে যায় এবং ময়লা আবর্জনায় ভরে যায়। যা মাসের পর মাস পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দুর্গন্ধের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এলাকাবাসীকে বসবাস ও চলাচল করতে হয়। পাশাপাশি গরুর হাটের কারণে এলাকার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয় এবং এলাকার বাসা বাড়িতে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যায়।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, রাজধানীতে যে ক’টি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা আছে, যেমন: বনশ্রী, বসুন্ধরা বারিধারা, পূর্বাচল সিটি, স্বদেশ (সানভ্যালী), বসুন্ধরা রিভারভিউ ইত্যাদি কোনোটির ভেতরেই অস্থায়ী গরু-ছাগলের হাট বসানোর কোনো নজির নেই।

এমতাবস্থায় জহিরুল ইসলাম সিটিতে (আফতাবনগর) বসবাসরত নাগরিকগণ সর্বসম্মতভাবে আপনার নিকট আকুল আবেদন করিতেছেন যে, নগরের অভিভাবক হিসাবে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করিয়া আগামী কোরবানির ঈদে যাতে জহিরুল ইসলাম সিটিতে (আফতাবনগর) গরু-ছাগলের অস্থায়ী হাট স্থাপন করা না হয়, তার ব্যবস্থা করে এখানে বসবাসরত নাগরিকদের মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া বাধিত করবেন।

এআইএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর