শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সুপ্রিম কোর্টে ফের আইনজীবীদের হাতাহাতি, ভাঙচুর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সুপ্রিম কোর্টে ফের আইনজীবীদের হাতাহাতি, ভাঙচুর

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছাড়াও হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোলসহ পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সমিতির সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করছেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা। এছাড়াও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে উভয় পক্ষ।

মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুর দেড়টার পর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির এ ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


এ দিন দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। ওই সময় একদল আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষে দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। ঘটনার সময় সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন। একই সময় বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকশ’ আইনজীবী সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও করেন। পরে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছাড়াও হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

Courtপরবর্তীকালে দুপুর সোয়া ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত কয়েকশ আইনজীবী মুখোমুখি হয়ে ধাক্কাধাক্কি, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর চালায়। এতে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে সম্পাদকের কক্ষে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন। পরে সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল তাদের সঙ্গে সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন এবং ঘটনা সম্পর্কে সমিতির সভাপতিকে অবহিত করেন।

এদিকে, দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলার পর দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে থেকে চলে যান। পরে তারা সমিতি ভবনের নীচতলায় প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা স্লোগান দেন। এ সময় তারাও ‘ব্যালটপেপার চোর’ বলে স্লোগান দেন।

হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চার থেকে পাঁচজন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকার সমর্থিত আইনজীবীদের হামলায় পাঁচ থেকে ছয়জন বিএনপিপন্থী আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে আবদুন নূর দুলাল বলেন, তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আসেনি। সহিংসতা করতে এসেছে। সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন।

Courtএ সময় সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে, সবই আমদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

আওয়ামীপন্থী এই আইনজীবী বলেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল ব্যালটপেপার ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের নির্বাচন করার কোনো মানসিকতা ছিল না। তারা নির্বাচনের আগের দিন থেকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সবকিছু করেছে। তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপারেট করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সমস্তকিছু ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করার কারণে বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত ও রক্তাক্ত হয়েছেন। একজন আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেছে। ওই আওয়ামী আইনজীবী ফকির সাহেব ও দুলাল সাহেবের বডিগার্ড হিসেবে চলে। তিনি তাদের পাহারাদার। আজকে আবার তিনিই সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করেছে। ভাঙচুর করে আজকে আমাদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ তথা সাধারণ আইনজীবীদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

>> আরও পড়ুন: ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করল এডহক কমিটি

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, কথায় কথায় আইনজীবীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। পুলিশ আসছে, সাদা পোশাকধারী পুলিশ আসছে। এসে আইনজীবীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এ অবস্থা একটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজ পুলিশ ও আওয়ামী আইনজীবীদের হাত থেকে নিস্তার চাচ্ছে।

আওয়ামীপন্থীরা নিজেরই হামলার নাটক সাজিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষ জোর-জবরদস্তি করে দখল করে বসে আছে। তাদের পাহারা দেওয়ার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ ও কিছু আইনজীবীদের রাখা হয়েছে। তারা নির্বাচিত নয়, তারা অবৈধভাবে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের চেয়ার দখল করে বসে আছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের ‘প্রহসনের নির্বাচনে’ ভোট চুরির প্রতিবাদে এবং সমিতির নতুন নির্বাচনের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের প্রথম দিন থেকে বিক্ষোভ করছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরাও সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ করছেন। এরপর থেকেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোলের ফলে প্রায়ই আদালত অঙ্গনের পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে।

>> আরও পড়ুন: আদালত চত্বর থেকে কাঁচা ফল সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপে আবেদন

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৫(৬) বিধি মোতাবেক আগামী ১৪-১৫ জুন সমিতির ২০২৩-২০২৪ সালের নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করেছে নতুন নির্বাচন করার লক্ষ্যে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন এডহক কমিটি। সমিতির সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (১৫ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন এডহক নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ৩০ মার্চ বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সমিতির সাধারণ সদস্যদের এক তলবি সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে গত ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারে কনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি উল্লেখ করে আগামী ১৪-১৫ জুন সমিতির নতুন এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। তলবি সভা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ওইদিন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে সুপ্রিম কোর্ট বারে ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়।

এআইএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর