মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত ছালাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত ছালাম

হাসান ছালামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ‌কয়েক বছর ধরে ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার উপরে লোন নিয়েছেন। ‌কয়েক কিস্তি দিয়ে কোনো ব্যাংকে তিনি পুরো টাকা পরিশোধ করেননি। শুধু এখানেই শেষ নয়, ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে তার ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। সালাম প্রতারণা টাকা দিয়ে ঢাকার পান্থপথ এলাকায় আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। তবে সালামের সেই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তার আগেই তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। 

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে হাসান ছালামকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩। তাকে গ্রেফতারের পর এমন চঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

arrest

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জেমস্ সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশীপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে ছালাম। পরে গিয়াস উদ্দিন তার কাছে প্রতি মাসে তার লাভের টাকা চাইলে সে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করতে থাকেন। গিয়াস উদ্দিন সঠিকভাবে লাভের টাকা না পাওয়ায় নিরূপায় হয়ে তার মূলধন ফেরত চায়। তখন হাসান ছালাম পাওনাদার গিয়াস উদ্দিনকে তার মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে গিয়াস উদ্দিন মামলা দায়ের করলে আদালত ছালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন ও গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করেন। সেই গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ‌‌

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে ছালাম। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরে তা বন্ধ করে দেন। নিদির্ষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো পরিশোধ না করায় এসকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। এতেও কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপির দায়ে মামলা হয়।


বিজ্ঞাপন


arrtest

এছাড়াও আদালতে চলমান মামলাগুলোর শুনানিতেও সে কখনও হাজিরা দেয়নি। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য সে তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেন এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসান ২০০৮ সালে কুমিল্লায় মাসিক হারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কতিপয় লোকজনের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকা চলে আসেন। এখানে এসে বসুন্ধরা সিটিতে প্রথমে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে জেমস্ সুপারশপ নামে পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে সে বসুন্ধরা সিটিতে আরো ৪ টি দোকান ভাড়া করে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাটের ব্যবসায় এসকল অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকেন। এছাড়াও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুঁজি করে ও জমি মরগেজ দিয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণকৃত ঋণসমূহের বিপরীতে প্রথম কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরে তা বন্ধ করে দেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা মামলা চলতে থাকে এবং ২০২০ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তখন থেকে তিনি রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গা ঢাকা দেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি ও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

এমআইকে/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর