সাধারণ ডায়েরি বা জিডি একটি আইনগত বিষয়। তবে বিষয়টি একেবারে সাদামাটা নয়। দৈনন্দিন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে থানায় মানুষের জিডি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বা কেউ হত্যাসহ নানা হুমকি দিলে আইনি প্রতিকার চেয়ে জিডি করা হয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এসব বিষয় থানাকে জানানো আইনি দায়িত্ব (লিগ্যাল ডিউটি)। যেকোনো নাগরিকের জিডি নিতে পুলিশ বাধ্য। তবে অস্তিত্বহীন, গুরুত্বহীন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বিষয়ে জিডি নিতে পুলিশ গুরুত্ব কম দেয়।
আইনগত এই বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে কিছু ভ্রান্তধারণা। অনেকেই জিডি ও মামলা একত্রে গুলিয়ে ফেলেন। জিডি এবং এজাহার (মামলা) কিন্তু ভিন্ন বিষয়। কোনো ঘটনার আশঙ্কা থেকে করতে হয় জিডি। অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে থানায় মামলা বা এজাহার দায়ের করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
অনেকেই মনে করেন জিডি করতে টাকা খরচ হয়। কিন্ত এ ধারণা একেবারেই ভুল। জিডি করতে কোনো ধরনের ফি লাগে না। এটি একটি সাধারণ সেবা, যা পুলিশ দিয়ে থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে জিডি এক সময় এজাহারে পরিণত হয়। আইনের এ বিষয়টি জানতে খুব বেশি পড়ালেখা করতে হবে এমন ধারণাও ঠিক নয়। তবে জিডি করতে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকা জরুরি।
জিডিতে যেসব তথ্য দিতে হয়
জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) ফটোকপি, পেশাগত বিষয়ে বর্ণনা দিতে হয়। কোনো জিনিস হারিয়ে গেছে বা কোনো বিষয় নিয়ে ভয় বা শঙ্কা থাকলে, বা আপনার কাছ থেকে কোনো লোক হারিয়ে বা পালিয়ে গেলে জিডিতে সেগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ করতে হয়। যেমন কার দ্বারা ভয় পাচ্ছেন। কে আপনাকে ভয় দেখাচ্ছে। কখন আপনা্র জিনিস হারিয়েছে। কিভাবে হারিয়ে। হারানো বস্তুর বিবরণ ইত্যাদি।
ডিজিতে হারানো বিষয়ের বিবরণ, আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে বা যে হুমকি দিয়েছে, তার নাম ঠিকানা হুমকির স্থান, তারিখসহ বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া বিষয়ের বিবরণের সঙ্গে সেই জিনিসের একটি ফটোকপি যুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করা যাবে না। পুলিশ যদি মনে করে গুরুতর অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও এজাহার হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে জিডি করার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। যেটি আগে ছিল না। সাধারণত কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন-জাতীয় পরিচয়পত্র পেশাগত পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে সেগুলোর বিষয়ে নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করতে হবে।
পুলিশের দেওয়া নির্দিষ্ট ফরমে অথবা সাদা কাগজেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর জিডি করা যায়। জিডিতে জিডিকারীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, পিতা-মাতা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, ঘটনার বিবরণ, তারিখ, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। একদম নিচে জিডিকারীর সই দিতে হবে।
জিডি করার পরের কাজ
জিডি করার পর জিডির নম্বর, সময়, তারিখ এবং জিডি গ্রহণকারী অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল দেওয়া একটি কপি আপনাকে দেওয়া হবে। জিডিটি নথিভুক্ত হবে। কপিটি আপনি নিজের জন্য সংরক্ষণ করবেন। জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছে পাঠাবেন। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনাটি আমলযোগ্য হলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ তা আপনাকে জানাবেন।
১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪৪ ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪, ১৫৫ ধারা অনুসরণ করে জিডি করতে হয়। থানায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্ণনাটি জিডির ৬৫ নম্বর ফরমে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
এআইএম/এমআর

