শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সালাম মুর্শেদীর বাড়ি ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট নিয়ে যা ঘটলো আদালতে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সালাম মুর্শেদীর বাড়ি ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট নিয়ে যা ঘটলো আদালতে

বিচারাধীন বিষয়ের ‘অন মেরিটে’ নিউজ না করতে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) খুলনা-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়িকে কেন্দ্র করে দায়ের করা রিটের শুনানির সময় এমন আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এদিন ৩টার দিকে রিটের শুনানিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে আসেন। শুনানির শুরুতে তিনি বলেন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী গুলশানের বাড়ি জালিয়াতি করে দখলে আছে, গণমাধ্যমের এমন প্রতিবেদন ঠিক না। বিষয়টি আপনাদের কাছে পেন্ডিং আছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে কেমনে চলবে? মাই লর্ড এমনটি হতে পারে না। মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে। সাব জুডিস আছে। মিডিয়া অনেক কিছু লিখে। রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ইঙ্গিত করে বলেন, মিডিয়াতে গেল। লাইভ করলাম। এগুলো হতে পারে না।  


বিজ্ঞাপন


এরপর এজলাসে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী ধুরশীদ আলম খান। তিনি বিষয়টি নিয়ে দুদকের ভূমিকার কথা আদালতকে জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুদক কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছে। এরপর একটি চিঠি পড়ে শোনান। বলেন, এই চিঠি পাওয়ার পর সচিব সাহেব তদন্ত রিপোর্ট না দিলে আমরা কি বলবো। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানিতে প্রতিক্রিয়া দেখান। তখনই মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় আইনজীবীদের মধ্যে। 

তখন আদালত সুমনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, কথা বলবেন সামনে এসে। ধমক দিয়ে না।  তখন সুমনের আইনজীবী অনিক আর হক আদালতে বলেন, মাই অ্যাপোলোজি, মাই লর্ড। 

তখন আদালত বলেন, আমারা কোনো পেপারের খবর শুনবো না। মিডিয়া দেখবো না। নথি দেখবো। নথি দেখে আদেশ দেব। বাইরে পত্রিকায়, অনলাইনে, ফেসবুকে কি হলো সেগুলো দেখবো না। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, যা দেখবেন তাই লিখবেন। তবে অন মেরিটে লিখবেন না।

অন মেরিটে নিউজ না করতে আদালতের আদেশটি কি কেবল এই মামলায় নাকি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, অবশ্যই শুধু এই মামলায়। কারণ আমরা এই মামলা নিয়েই কথা বলছি। আমরা বাইরেরটা বলছি না।


বিজ্ঞাপন


আদেশের পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলক খান সাংবাদিকদের বলেন, সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী গণমাধ্যমের একটা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেছেন, গণমাধ্যম অলরেডি রায় দিয়ে দিচ্ছে। কীভাবে রায় দেবে? এটাতো আদালতে বিচারাধীন।

‘আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, গণমাধ্যম তো এ ধরনের রায় দিতে পারে না। যতক্ষণ এটা বিচারাধীন বিষয়। সাব জুডিস ম্যাটার কোর্টে নিষ্পত্তি হবে। এর আগ পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোর্ট প্রসেডিংস সাংবাদিকরা লিখতে পারবে। কিন্তু কোনো ফাইন্ডিং দিতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে কোনো সিদ্ধান্ত না হবে।’

আজ আদালতে গণপূর্ত সচিবের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, দুদকের পক্ষে মো. খুরশীদ আলম খান, রাজউকের পক্ষে জাকির হোসেন মাসুদ, সালাম মুর্শেদীর পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা শুনানি করেন। রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে ব্যারিস্টার অনিক আর হক শুনানি করেন।

মামলাটি আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখে এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে সরবরাহ করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই বাড়ি সংক্রান্ত রেকর্ড ১৬ জানুয়ারি বা তার আগে আদালতে দাখিল করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে। এগুলো দিতে কোনো বিলম্ব মানবেন না আদালত।

‘জালিয়াতি করে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে নেন সালাম মুর্শেদী’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরে বলা হয়, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী গুলশানের যে বাড়িতে বাস করছেন সেই প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সেই পরিত্যক্ত সম্পত্তি (প্লট) দখলে নিতে নেওয়া হয়েছে নানা চতুর কৌশল। সৃজন করা হয়েছে নানা নথি।‘এমনকি ওই প্লটটি প্রকৃতপক্ষে যে সড়কে অবস্থিত সেই সড়ক নম্বরও বদলে ফেলা হয়েছে ওই সৃজনকৃত নথিতে। ফলে গুলশান আবাসিক এলাকায় রাজউকের লে-আউট নকশায় কথিত বাড়ির অস্তিত্ব নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির প্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। একইসঙ্গে ওই তদন্ত কমিটি প্লটটি অবিলম্বে সরকারের দখলে নিতে সুপারিশ করেছে।’

এই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গটি শুনানিতে আসে।

এআইএম/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর