শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘আমি চাঁদাবাজি করছি, কেউ বিশ্বাস করব?’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আমি চাঁদাবাজি করছি, কেউ বিশ্বাস করব?’

ছেলে-মেয়েরা বলে আপনার বিরুদ্ধে এত মামলা দেয়, আপনি বাঁচবেন কীভাবে? তারা মামলার খরচ দিতে দিতে ত্যক্ত-বিরক্ত। আর পারি না। পুলিশ মামলা দেয়, ডিবি মামলা দেয়, এমপির শ্যালিকা মামলা দেয়, সিআইডি ঘুষ চায়, সব শেষে নিজের চাচাতো ভাই মামলাবাজ জামসেদের চাঁদাবাজির মামলায় জামিন নিতে আইছি। আমাগো দ্যাশের নিম্ন আদালতের উকিলরা কইছে জামিন হবে কিনা সন্দেহ লাগে। তাই হাইকোর্টে আইছি।

চাঁদাবাজির এক মামলায় জামিন নিতে আসা বৃদ্ধ আমানুল্লা শাহিন হাইকোর্টের দেওয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দুর্ভোগের কথা এভাবেই এই প্রতিবেদককে জানাচ্ছিলেন। সকালে প্রধান ফটক খোলার আগেই সেখানে উপস্থিত হন আমানুল্লা শাহিন।


বিজ্ঞাপন


চাঁদাবাজির মামলায় সাধারণত জামিন কম দিয়ে থাকেন বিচারিক আদালত। তাই আইনজীবীদের পরামর্শে হাইকোর্টে আগাম নিতে এসেছেন সরকারি চাকরি থকে অবসরে যাওয়া নোয়ালাখালীর এই ভুক্তভোগী।

কী নিয়ে ঝামেলা তা জানতে চাইলে বৃদ্ধ আমানুল্লা শাহিন বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরিতে ছিলাম। রিটায়ার্ড করছি ২০১১ সালে। গত ১১ বছর পেনশন খাচ্ছি সরকারের। সরকারি হিসেবে আমার বয়স ৬৯ বছর। এ অবস্থায় আমি চাঁদাবাজি করছি, এমন কথা কেউ বিশ্বাস করবে? চাঁদাবাজির মামলা দিছে আমার জেঠাতো ভাই জামসেদ উল্লাহ, পিতা সিরাজুল হক। সাম্বাদিকরা (সাংবাদিক) তখনো বলছে, এ (জামসেদ) একটা মামলাবাজ। মামলাবাজের খবর পেপারে আইছে। পেপার লইছি। এহন খালি মামলা করে। খালি মানুষরে হয়রানি করতেছে। আমি নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে আসছি। ঢাকায় আজ চারদিন। নিম্ন আদালতের উকিলগো সন্দেহ, জামিন দিব না। তারা কইছে বড় ল’ইয়াররা আছে, উকিলরা আছে। হাইকোর্টে আপনি জামিন চান। তাই এখানে জামিন চাইতে আইছি।

আমানুল্লাহ শাহিন আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ডিবি দুইটা, পুলিশ দুইটা মামলা করছে। আর স্থানীয় এমপির শ্যালিকা একটা মামলা দিছিল, সেটিতে আমার পক্ষে রায় আসছে। তারা আমারে আরও ১৯ ডিসিমাল জমি কম দিছে। রাস্তায় গেছে, সরকারি রাস্তা আর ওই ১৩ ডিসিমাল তাদের বাড়ির সামনে- হেইডাও আমার দিতে অইব। বলে, এদের বাড়ির সামনে। তারপরও আমি মানি গেছি। মানি যাইবার পরও এমপির (নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী) কাছে তারাই বাদী অইছে। তার ভাই শহিদুল্লার বউ বাদী।

ঢাকায় আসা-যাওয়া ও মামলার খরচ কীভাবে যোগান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে আছে। এক মেয়ে আছে জাপান। সে খরচ দিতেছে। তারা খরচ দিতে দিতে ত্যক্ত হয়ে গেছে। তারা বলে, আপনারে এত মামলা দেয়, আপনি বাঁচবেন কিভাবে?


বিজ্ঞাপন


আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়ে প্রতিকার নেবেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আইনি পদক্ষেপ নিছি। পুলিশ কেস করছি। পুলিশ কেসে আমার পক্ষে রিপোর্ট দিছে। তারা আবার এমপির কাছে গেছে সবাই। এমপি আবার এই কেস পাঠাইছে ওসির কাছে। ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কয়, আমি তো আমানুল্লাহ শাহিনদের পক্ষে রিপোর্ট দিছি। এখন আমি আর কি করমু। পরে মামলাটি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজু মিয়ার কাছে দিছে। মনজু মিয়া দেড় বছর হিসাব-নিকাশ করে আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটা অর্ডার দিছে। রোয়েদাদ মোতাবেক তারা জায়গা মেপে দিয়েছে। বাদীরা এগুলো মানে না।

যারা আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে তাদের সঙ্গে আপনাদের বংশগত শত্রুতা ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে এই ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাবা বলে গেছে কারও সঙ্গে মামলায় জড়াইও না। আমিও সেটি মেনে চলার চেষ্টা করি। আমি সরকারি চাকরি করছি, আমি সেখানে যাইও নাই। যখন মাঠ জরিপের ট্রাইব্যুনাল আসলো, তখন আমি সেখানে দেখলাম যে আমাদের জমি হলো সাড়ে ১২ ডিসিমাল। সে আমাদের ভাই-বোন কারো নামে জমির রেকর্ড করে নাই। তার নামে ৫২ ডিসিমাল জমি রেকর্ড করেছে। তার ভাইদের নামেও করে নাই। আমি নিম্ন আদালতে বিচার না পাইলে হাইকোর্টে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিমু। আমার তো বাঁইচতে অইব।

আমানুল্লাহ শাহিনের সঙ্গে আসা এ মামলার আরেক আসামি মো. সেলিম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি জমি মাপার সময় ছিলাম। এ জন্য আমাকেও আসামি করা হয়েছে। সেলিম বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজের ক্ষতি করে দৌঁড়াইতেছি। ব্যবসা ও চাকরি বাদ দিয়ে আমানুল্লাহর সঙ্গে আসা অপর দুই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জমির বিরোধ মিটানোর সময় সঙ্গে ছিলাম, তাই মামলা খেয়ে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছি। এ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।

এআইএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর