বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ির নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ির নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ
ফাইল ছবি

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত বাড়ির ভোগ-দখলের নথিপত্র চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাড়িটি দখলের বিষয়ে  ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র চেয়ারম্যান ও সালাম মুর্শেদীকে হলফনামা করে তা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) এ বাড়ি সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


বিজ্ঞাপন


পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সিইএন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়ি দখলের বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আইনজীবী সুমন সাংবাদিকেদের বলেন, ‘মামলাটি আগামী ১৩ নভেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।’

শুনানিতে আদালতে সুমন বলেন, গুলশানের যে বাড়িতে সালাম মুর্শিদী বসবাস করছেন সেটির নামজারি দলিল তিনি রাজউক থেকে পেয়েছেন। রাজউকের সম্পত্তি না এটা। গুলশানের মতো জায়গা অবস্থিত এই জমির অনেক দাম। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে দুদক আমার আবেদন আমলে নেননি। কীভাবে রাজউক এটি আব্দুস সালাম মুর্শিদীকে দিল?

জবাবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতে বলেন, আমাদের পার্ট হলো দুর্নীতি হয়েছে কী না তা দেখা। এই বাড়ির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। সরকার এ মামলার মূল পার্টি। আমরা মূল পার্টি না। বিষয়টি মিস ইউস হয়েছে কী খতিয়ে দেখা দরকার। পরে আদালত এ মামলার শুনানিতে রুল দিতে চান। তখন আদালত বলেন, এখনই নিষ্পত্তি করার দরকার নাই।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের ডিএজি একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সালাম মুর্শিদী একজন ফুটবলার। উনি এখনও বাফুফের সহসভাপতি। এই সম্পত্তির বিষয়ে আমাদের জানার দরকার আছে। আমরা একটু খবর নেই। যোগাযোগ করে নেই। তারপর শুনানি করবো। আমরা সময় নিয়ে দেখতে চাই।


বিজ্ঞাপন


আদালতে দাঁড়িয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, উনি ফুটবলের দায়িত্বে আছেন। একজন এমপি। উনার এই সম্পত্তির দরকার কী। মাই লর্ড রুল না দিলে হবে না। রুল দেন মাই লর্ড। তখন আদালত রুল ও ডাইরেকশন দেন।
সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন।

রিটে আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশানে ওই বাড়িতে সালাম মুর্শিদী দখল করে বসবাস করছেন। রিটকারী এ দাবির পক্ষে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করেন। এসব চিঠির ভাষা প্রায় একই।

পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, ২০১৫ ও ১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চায় পূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় চলতি বছরের ৪ জুলাই ফের চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দফতর থেকে বাড়িটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হলেও রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।

রিটকারী সুমনের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে এসব চিঠি নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট দফতরে গিয়ে তিনি তথ্য যাচাই করেন। তথ্যের যাচাইয়ের পর পরিত্যাক্ত সম্পত্তির বাড়ি ভোগ-দখলের অভিযোগ অনুসন্ধান করে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গত ১১ আগস্ট তিনি দুদকে আবেদন করেন। কিন্তু দুদক তার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় তিনি রিট আবেদন করেন। তবে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন সালাম মুর্শেদী।

রিট দায়েরের পর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বাড়িতে আছি ২৬ বছর ধরে। বিষয়টি এমন নয় যে, এমপি হওয়ার পর বাড়িটি আমি পেয়েছি। আমি বাড়িটি কিনেছি ১৯৯৭ সালে। তখন থেকেই ভোগ-দখলে আছি। মোট ২৭ কাঠা জমির ওপর ছিল বাড়িটি। আমরা দুই বন্ধু এটি কিনেছিলাম। তারপর বাড়িটি দুইভাগ করে দিয়ে মিউটেশন (নামজারি) করে দিয়েছে রাজউক। এরপর প্ল্যান হয়েছে। ২০০৭ সালে সে প্ল্যান অনুযায়ী আবার বাড়ি করেছি। এরপর আবার নামজারি হয়েছে। ভূমি ট্যাক্স দিচ্ছি, গ্যাস, বিদ্যুতের বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি।’

এআইএম/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর