বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তামাক অধ্যাদেশের খসড়া পুনর্বিবেচনায় গণআবেদন চাষিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

তামাক অধ্যাদেশের খসড়া পুনর্বিবেচনায় গণআবেদন চাষিদের

প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের কিছু ধারা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণআবেদন জমা দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার তামাক চাষিরা। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া এই গণআবেদনে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই ধারাগুলো বাস্তবায়ন হলে কৃষকদের জীবন-জীবিকার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে। 
 
রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলার চার  হাজারের বেশি চাষি এই গণ আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। আবেদনগুলো মঙ্গল ও বুধবার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেহেরপুরের ১ হাজার ৩০০, কুষ্টিয়ার ১ হাজার ২৮০, চুয়াডাঙ্গার ৪৫০, লালমনিরহাটের ২৭৫, গাইবান্ধার ২০০, রংপুরের ১৫০, খাগড়াছড়ির ১১৫ জনের বেশি কৃষক স্বাক্ষর করেছেন।  

গণস্বাক্ষর আবেদনে চাষিরা বলেছেন, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪- এর খসড়া আমরা গভীর মনোযোগ সহকারে পর্যালোচনা করেছি। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যকে আমরা সম্মান করি। তবে প্রস্তাবিত খসড়ার কিছু ধারা মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ও কৃষকদের জীবন-জীবিকার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ 


বিজ্ঞাপন


গণ আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তামাক খাত শুধু চাষি ও খুচরা বিক্রেতাদের জীবিকার ভিত্তি নয়; এটি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর তামাক ও তামাকজাত পণ্য রপ্তানি মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। প্রস্তাবিত খসড়ার কিছু ধারা বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় ও রপ্তানি সক্ষমতা কমবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে প্রান্তিক কৃষকের জীবনমানের ওপর। 

এতে বলা হয়, খসড়া অধ্যাদেশে তামাকজাত দ্রব্যে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ উপাদান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নযোগ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। এর ফলে বৈধ উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি অবৈধ বাজার বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে, যা কাঁচা তামাকের চাহিদা কমিয়ে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া প্রস্তাবনা অনুসারে তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে কৃষকদের জন্য বিদ্যমান প্রশিক্ষণ, সহায়তা ও কমিউনিটি উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে প্রান্তিক কৃষক ও তাদের পরিবারের জীবনযাত্রায়। 

গণ আবেদনে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুসারে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করা ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হলে বাজারের স্বাভাবিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এতে বৈধ বিক্রি ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে অবৈধ বাজার বিস্তৃত হবে। যার পরোক্ষ ও সরাসরি প্রভাব পড়বে কৃষকের উৎপাদন ও আয়ের ওপর। 

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গণস্বাক্ষর আবেদনপত্রে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করার আগে কৃষক সমাজকে আনুষ্ঠানিক অংশীজন সংলাপে অন্তর্ভূক্ত করা, কৃষকের জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সংকটপূর্ণ ধারাগুলো পুনর্বিবেচনা করা এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই আইন প্রণয়ন করা। 


বিজ্ঞাপন


এমআর/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর