ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এই আদেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিন সাত দিনের রিমান্ড শেষে কবিরকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে আবারও সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। আদালত পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান হাদি হত্যা মামলায় কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকার একটি ইটভাটার ছনের ঘর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন রাতে তাকে পল্টন থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে সেখান থেকে কবিরকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে রিকশা করে যাওয়ার সময় হাদিকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করেন মোটরসাইকেলে যোগে আসা ছাত্রলীগের ক্যাডার ও একাধিক মামলার আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। এরপর তারা দ্রুত পালিয়ে যান।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনার কিছুক্ষণ আগে হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে এবং অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে পুরো অফিস রেকি করেন কবির। সেখানে কারও বের হওয়ার অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাকে।
হাদির অফিস রেকি করার সময় কবিরের পরনে ছিল একটি ছাঁই কালার হুডি ও সাদা কালারের প্যান্ট এবং পায়ে চামড়ার জুতা। তিনি লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে একবার সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দ্রুত অফিসে প্রবেশ করেন। যেখানে তার চেহারা পুরোপুরি বোঝা যায়।
হাদিকে গুলি করার আগে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলের (যিনি মুখে চশমা,কালো হুডি ও পরনে জিন্স প্যান্ট পড়া ছিলেন) সঙ্গে দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায় কবিরকে। ফলে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করার চেষ্টায় পুলিশ।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডের পাকা রাস্তার উপর শরীফ ওসমান হাদির পেছন থেকে অনুসরণ করে আসা মোটরসাইকেলে থাকা আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামি ওসমান হাদিকে চলন্ত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
আহত হাদিকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসারত অবস্থায় হাদি মারা যান। পরদিন তার মরদেহ দেশে আসে। এর পরদিন হয় জানাজা। একইদিন তাকে সমাহিত করা হয় শাহবাগে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবরের পাশে।
এএইচ

