২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অস্থিতিশীল সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়, যার একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। এরই মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতা ও প্রাণের ঝুঁকি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেইলের মাধ্যমে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
বিজ্ঞাপন
লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে আইনজীবী জানান, জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনে বাধা নেই। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও দেশে এক গভীর নিরাপত্তা সংকট ও ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লব পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়, যার একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। এরই মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতা ও প্রাণের ঝুঁকি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ (রোববার) জনস্বার্থে আমি নিজে নোটিশ পাঠিয়েছি।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাব মহাপরিচালককে লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হবে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নির্বাচনি মাঠ এখন বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে। এর প্রমাণস্বরূপ নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি সন্ত্রাসীদের গুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা প্রার্থীদের প্রাণনাশের কারণ হবে এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করবে।
নোটিশে এক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, গণভোট একটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ, তাই এতে সহিংস প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া। তাই অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
বিজ্ঞাপন
এমতাবস্থায়, নোটিশের মাধ্যমে দাবি জানানো হয়েছে যে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দিনে জুলাই সনদের ওপর গণভোট যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক লুণ্ঠিত সব অস্ত্র উদ্ধার এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে।
নোটিশে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।
এর আগে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মো. ইয়ারুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী রিট করেছিলেন। পরে রিট আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
এমআর/এফএ

