শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ইউনূসকে নাকানি-চুবানি দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২২, ০৪:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ইউনূসকে নাকানি-চুবানি দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’

গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ফিস নেওয়াসহ নানা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।

রোববার (৩ জুলাই)  সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের পক্ষে মামলা করে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নাকানি-চুবানি দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, আমি শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি কোর্টে লিখিত আকারে বলবো। আপনারা সেদিন থাকলে সব শুনতে পারবেন। তার নিজেরসহ মোট ৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসত্য গুজব। 

এক লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯ জুন, ২০২২ ইং তারিখ থেকে একটি অখ্যাত অনলাইন পোর্টাল থেকে আমাদের নামে একটি গুজব রটেছে যে আমরা নাকি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে আতাত করে তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে গ্রামীণ টেলিকমের বিপক্ষে দায়ের করা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এরূপ গুজব সম্পূর্ণরূপে অসত্য, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। আমরা তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউসুনকে ‘চুবানী’ দিয়েই সুদে আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম ১৯৯৫ সালে ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৭ সালে নরওয়ের টেলিনর ও গ্রামীণ টেলিকম মিলে গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের একমাত্র দেশীয় অংশীদার গ্রামীণ টেলিকমের শেয়ার ৩৪.২০ শতাংশ যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার উপর ডিভিডেন্ট পায়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীগণ বিগত ২০১৭ ইং সাল থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর বিধান মোতাবেক কোম্পানীর নীট মুনাফার ৫% অর্থ অংশগ্রহণ তহবিল এবং কল্যাণ তহবিল বাবদ তাদের প্রাপ্য অংশ দাবী করে আসছে। এবং সে দাবীতে উক্ত কোম্পানীর ১০৭ জন শ্রমিক কর্মচারীর পক্ষে তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকা’তে ১০৭ টি মামলা দায়ের করি। 


বিজ্ঞাপন


উক্ত মামলা চলার সময়েই তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার পরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করি এবং সে মোতাবেক তারা ২০১৮ ইং সালে জনাব কামরুজ্জামানকে সভাপতি এবং জনাব ফিরোজ মাহামুদ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করেন যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বি-২১৯৪। 

উক্ত ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে পরবর্তীতে আমরা একটি শিল্প বিরোধ মোকদ্দমা দায়ের করি যার নম্বর ১৬৬৬/২০১৯। গ্রামীণ টেলিকম এই ১০৭ টি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে শতাধিক রীট পিটিশন দায়ের করেন যেখানে আমরা শ্রমিক বন্ধুদের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি।

ইউসুফ বলেন, আপনারা আরো অবগত আছেন যে, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ গত ২৫ অক্টোবর ২০২০ সালে কেবল মাত্র ব্যবস্থাপনা পরিচালাক ব্যতীত অপর সকল ৯৯ কর্মীকে একসাথে এক নোটিশেই বে-আইনী ভাবে ছাঁটাই করা দিয়েছিল। উক্ত বে-আইনী ছাঁটাই চ্যালেঞ্জ করে চলমান রীট পিটিশনে আমরা পৃথক পৃথক শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ৩৮ টি দরখাস্ত দায়ের করি এবং ছাঁটাইকৃত শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকুরিতে পুনর্বহাল করতে প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূসদের বাধ্য করি। 

এছাড়াও শ্রম আদালতে বিচারাধীন ১৬৬৬/২০১৯ মামলায় এবং তা থেকে উদ্ভূত রীট পিটিশন ৬০৪/২০২১ এ ৪/৫ টি দরখাস্ত কারার পর আরো ২৮ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে তাদের স্বপদে চাকুরিতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কাজ প্রদান না করায় আমরা মুহাম্মদ ইউনুস এবং তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো. আশরাফুল হাসান এর বিরুদ্ধে ৩ টি আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করি যেখানে প্রফেসর ইউনুস মহামান্য আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

তিনি বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ টেলিকম হতে শ্রমিকদেরকে দাবীকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত ও ট্রেড ইউনিয়ন ধ্বংস করার জন্য ঢাকা লজিস্টিক নামক একটি দালাল প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে চলমান মামলায় বিচারক তথা অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগের চুক্তি করে। আমরাই আমাদের আইনি পদক্ষেপে প্রফেসর ইউনূসের এহেন ষড়যন্ত্রকে নশ্যাৎ করে দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে আপনারা বিগত ১৮ ও ২০ আগষ্ট, ২০২১ ইং তারিখের বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। উক্ত প্রতিবেদন থেকে সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব জানতে পেরেছিল যে উক্ত লবিস্ট প্রতিষ্ঠান এর সহযোগিতায় অবৈধভাবে ট্রেড ইউনিয়ন ধ্বংস ও শ্রমিকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে মুহাম্মদ ইউনূস এর নীল নকশা করেছিলেন। 

উক্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর স্টেক হোল্ডার হিসেবে সরকারের সৎ ও ন্যায়পরায়ন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের ছবিসহ নাম ব্যবহার করেন। মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের উক্তরূপ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে নিরীহ শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে তাদের প্রাপ্য পাওনাদি আদায় করে দেওয়া লক্ষ্যে আমরা প্রায় ৩ মাস নিরালস গবেষণা করার পর ইন্ডিয়ান ও ইংলিশ কোর্টের বিভিন্ন কেস ল’র রেফারেন্স খুজে বের করে উক্ত ট্রেড ইউনিয়নকে বাদী করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে গ্রামীণ টেলিকম অবসায়নের জন্য একটি মামলা দায়ের করি যার নম্বর ২৭১/২০২১। প্রথমে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে তৎপরবর্তীতে ৩ দিন বিস্তারিত শুনানীর পর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি বেঞ্চ উক্ত মামলাটি গ্রহণ করতে সম্মত হন।

গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) এ বিষয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদেরকে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয় তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেনো কোনো প্রশ্ন ওঠে।

এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেয়নি যার ফিস ১২ কোটি টাকা হবে।

এ পর্যায়ে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীকে ডাকেন। প্রথমে ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কত টাকা ফিস নিয়েছেন? তখন আইনজীবী উত্তরে বলেন আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন। এরপর আদালত শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। এসময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি ৮ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি। 

এআইএম/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর