শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘জোর করে কারও চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া অপরাধ’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘জোর করে কারও চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া অপরাধ’
চার মাস আগে ময়মনসিংহের কাশীগঞ্জ বাজারে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিনের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর পর ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজ্ঞরা বলছেন, কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে এমন কিছু করা সংবিধানবিরোধী এবং অপরাধ। তারা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে সমাজে বিবাদ বাড়বে। এজন্য এমন কাজ কঠোর হস্তে দমন করা উচিত বলে মত দেন তারা।

হালিম উদ্দিনের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ এবং স্থানীয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলার হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কেউ যদি কোনো ধরনের আইন অমান্য করে কাজ করে সেটা দেখার বিষয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এই দায়িত্ব সাধারণ মানুষ নিতে পারে না। এ রকম হতে থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। মানুষ বিবাদে জড়িয়ে যাবে। সমাজ সঠিকভাবে চলবে না। সমাজ বা রাষ্ট্রে যে যে দায়িত্বে আছে তাকে সেই দায়িত্ব পালন করা উচিত।’ 

হিউম্যান রাইডস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এ ধরনের কাজ অপরাধ। সংবিধানে বলা আছে, আইন মেনে প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। সেক্ষেত্রে কে চুল বড় রাখলো বা কে ছোট রাখলো সেটা তো অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না। বা কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে চুল দাঁড়ি কেটেও দিতে পারে না। এগুলো চলতে দিলে স্বাধীনতা থাকবে না। সরকারকে কঠোরভাবে এ ধরনের  অন্যায় দমন করা দরকার। এ ধরনের আচরণ চলতে থাকলে রাষ্ট্র ক্ষতি হবে। আমি একটা কাজ করলাম আপনি পছন্দ করলেন না, অথবা আপনি একটা কাজ করলেন আমি পছন্দ করলাম না এটা হতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।’ 

এদিকে ওই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম। তিনি বলেন, হালিম উদ্দিন কাদেরিয়া নকশবন্দিয়া অনুসারী। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।

চার মাসের আগের ওই ঘটনায় গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তারাকান্দা থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম ও পরিচয় এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. টিপু সুলতান।


বিজ্ঞাপন


মামলার তদন্ত কর্মর্কতা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের। তবে সম্প্রতি ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানার পর আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানান ওসি।  

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে শনিবার থানায় যান হালিম উদ্দিন আকন্দ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার দিন বাজারে গেলে তারা জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনও আল্লাহার কাছে বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় এখন আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুইজন লোকসহ প্রায় ৮ থেকে ৯ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন এবং মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় আছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে, আমার মান ইজ্জত মারছে। আমি বিচার চাই।’  

হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে। গ্রামটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা সড়কের পাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক রোগী নন। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে ওনাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকে তিনি বেশভূষায় বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল-দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে জট ছিল তার মাথায়।

এআইএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর