শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হুমকিতে নিরাপত্তা, নড়েচড়ে বসেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

হুমকিতে নিরাপত্তা, নড়েচড়ে বসেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন
হুমকিতে নিরাপত্তা, নড়েচড়ে বসেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

ঘটনাটি গত ৩ আগস্টের। লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন মোল্লা মোসলেহ এলাহী ও জিয়া উদ্দিন সরকার নামের দুই ব্যবসায়ী। পরে পুলিশ তাদের আটক করে। তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানতেন না। শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। 

এর সপ্তাহখানেক পরের আরেকটি ঘটনা। কয়েক পদের মাদকসহ খন্দকার হাফিজুর রহমান নামের আরেক যুবক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে এনেক্স কোর্টের দিতে যাচ্ছিলেন। এসময় তার কাছ থেকে চার পিস ইয়াবা, মদ, হেরোইন ও পাঁচটি ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয় ওই যুবককে।


বিজ্ঞাপন


শুধু এই দুটিই নয়, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে। এতে বিচলিত ও শঙ্কিত আইনজীবী, বিচারক ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, উচ্চ আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। 

তবে এসব ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল চত্বরে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদক দ্রব্যসহ অবৈধ বস্তু বহন নিষিদ্ধ। কেউ তা অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রবেশপথে আর্চওয়াচ বসানোসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।

নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে আইনজীবী মো. ফারুক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা যারা প্রতিনিয়ত কোর্টে প্র্যাকটিস করি, তাদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয় এই অঙ্গনে। কিন্তু সম্প্রতি যেসব খবর শুনছি তাতে আমরা শঙ্কিত।’


বিজ্ঞাপন


সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বারের পক্ষ থেকেও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বারের ভেতরে সংগঠনের স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। সব গাড়ি আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। তিনটি আর্চওয়াচ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো বসিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা ফলো করব আমরা।’  

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়ন জরুরি উল্লেখ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বৈধ অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করেছে। আইনগতভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অস্ত্র বৈধ হলেও অনেক জায়গায় নেওয়া বা বহন করা নিষিদ্ধ আছে। ক্যান্টনমেন্ট বিজিবির দরবারসহ অনেক জায়গায় বৈধ অস্ত্রও নেওয়া নিষেধ আছে। এদিক বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যে সিদ্ধাস্ত নিয়েছে তা সঠিক।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একজন ক্লায়েন্ট সুপ্রিম কোর্টে আসেন। সঙ্গে তিনি লাইলেন্স করা একটি অস্ত্রসহ আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। প্রবেশের সময় তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন আমার কাছে অস্ত্র আছে এবং সেটা বৈধ। পরে দায়িত্বরত পুলিশ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে জানালে তাকে হাজির করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে। যেহেতু অস্ত্রটা বৈধ এজন্য মামলা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে তাকে মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে হয়েছে।’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু একটি সুরক্ষিত এলাকা, তাই লাইসেন্সসহ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করলে নিরাপত্তার বিঘ্ন হতে পারে। মাদকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নিয়ে এখানে প্রবেশ অপরাধ। এজন্য কর্তৃপক্ষ হয়ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’  

কী আছে সুপ্রিম কোর্টের প্রজ্ঞাপনে
গত ১৪ আগস্ট নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের সব অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল চত্বরে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ বস্তু বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। ফলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, মামলা পরিচালনায় নিযুক্ত আইনজীবীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ জরুরি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে আসা কিছু বিচারপ্রার্থী, মামলা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোর্ট প্রাঙ্গণে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ বস্তু বহন করছেন, যা আদালতের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। 

এতে বিচারপতি, আইনজীবী, কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া বৈধ লাইসেন্সধারী হলেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল চত্বরে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদক দ্রব্যসহ অবৈধ বস্তু বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
 
এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও অন্যান্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর