জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) তিনি ‘রাজসাক্ষী’ হন। এই প্রেক্ষাপটে রাজসাক্ষী কে, আসামি কীভাবে রাজসাক্ষী হন ইত্যাদি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
রাজসাক্ষী কে?
বিজ্ঞাপন
রাজসাক্ষী হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কোনো অপরাধমূলক ঘটনার পর মূল অভিযুক্তের বা অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং পরে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাধারণত নিজের সাজা কমানোর আশায় যিনি রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের বা পুলিশের কাছে জানায় যে সে অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে। সে রাজি হয় অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা আদালতে জানাতে। রাষ্ট্রপক্ষ তার সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য ও মূল্যবান মনে করলে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর আদালতে সে ধারা ১৬৪ সিআরপিসি অনুযায়ী জবানবন্দি দেয়।
আইনে যা আছে
ফৌজদারির অপরাধের বিচার হয় ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধিসহ অন্যান্য ফৌজদারি বিধান অনুযায়ী। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৩৩৯ ধারায় রাজসাক্ষী কে হবেন, রাজসাক্ষীকে ক্ষমা করা ও বিচারপদ্ধতির বিষয় বর্ণনা করা আছে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ‘রাজসাক্ষীর’ ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় আছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭ ধারার ভাষ্য হলো, কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ তদন্ত, অনুসন্ধান বা বিচারের যেকোনো পর্যায়ে অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করার প্রস্তাব দিতে পারেন। শর্ত হলো, তার জানামতে অপরাধসম্পর্কিত সামগ্রিক অবস্থা ও অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে মূল অপরাধী বা সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত প্রত্যেকের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করলেই তাকে ক্ষমা করা হবে।
আর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৮ ধারা অনুযায়ী, রায় দেওয়ার আগে যেকোনো সময় যে দায়রা আদালত মামলার বিচার করেছেন, তিনি বিচারকালে সংশ্লিষ্ট অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়ার শর্তে তাঁকে ক্ষমা করার আদেশ দিতে পারেন।
শর্ত ভঙ্গ করলে কী হবে?
রাজসাক্ষী ক্ষমা পাওয়ার শর্তেই নিজের অপরাধ এবং অন্য অপরাধীদের অপরাধের বিবরণ দেবেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ফৌজদারি আইনজীবীরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, কোনো রাজসাক্ষী যদি নিজের অপরাধ ও অন্য অপরাধীদের ব্যাপারে সত্য গোপন করেন কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেন, তখন তিনি রাজসাক্ষী থেকে আবার আসামি হয়ে যান।
সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় দুষ্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সাজা দেওয়ার বিষয়ে বর্ণনা আছে। এই ধারা অনুযায়ী, দুষ্কর্মের সহযোগী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি বলে গণ্য হবেন। দুষ্কর্মের সহযোগীর অসমর্থিত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আসামিকে সাজা দেওয়া হলে কেবলমাত্র সে কারণে সাজা বেআইনি বলে গণ্য হবে না।
এমএইচটি

