গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দলবদ্ধভাবে হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যা ‘মব’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই ‘মব’ দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সবশেষ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে সংঘবদ্ধ জনতা বাসায় গিয়ে হেনস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে। সরকার অবশ্য এ ধরনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান আগেই পরিষ্কার করেছে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা মনে করেন, সরকার শুধু বিবৃতি কিংবা লোক-দেখানো পদক্ষেপেই থেমে থাকলে ‘মব’ সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। এর বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এই সংস্কৃতি এখনই থামানো না গেলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। এর দ্বারা সমাজে বিদ্বেষ ও অস্থিরতা শুধু বাড়বেই। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হবে, যা জাতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
বিজ্ঞাপন
‘মব’ শব্দটি সাধারণত ‘ভিড়’ বা ‘জনতা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি বিশৃঙ্খল জনতা বা দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ করার জন্য একত্রিত হওয়া মানুষকে বোঝায়। এছাড়াও ‘মব’ শব্দটি ‘সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ভিড়’ বা ‘সহিংস জনতা’ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়।
‘মব’ বিট্রিশ আমল থেকেই ছিল জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মব সৃষ্টি করা মোটেও উচিত নয়। মব সৃষ্টি করলে ন্যায়বিচারে বিঘ্ন ঘটবে। বিচারের প্রতি মানুষের অনাস্থা আসে মানুষের। মব আগেও ছিল। এখনো হচ্ছে। এটা পুরনো। আগের তুলনায় মবের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে মানুষের নেগেটিভ এটিচুট তৈরি হয়।’
‘মব হচ্ছে আর কর্তা ব্যক্তিরা সেটি বসে বসে দেখছেন’- এমনটি মোটেও ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন হিউম্যান রা্ইডস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মব তৈরি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় করা যায় না। বর্তমান সময়ে সারাদেশে যে পরিমাণে মব তৈরি হচ্ছে সেটি আগে ছিল না। যদিও ব্রিটিশ আমল থেকেই মবের প্রচলন। তবে আগে সেটি কম ছিল।’
বিজ্ঞাপন
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘আজকে মবের বিরুদ্ধে তেমন কেউ কথা বলছে না। মব ভাইরাসের মতো হচ্ছে। বেশি বেশি মব করা হচ্ছে সারাদেশে। মবের কারণে অনেকেই মারা গেছেন। এর বিচার হওয়া উচিত। রাষ্ট্র এর দায়ভার এড়াতে পারে না। দেশের কোথাও কোথাও মব হচ্ছে আর রাষ্ট্রের যারাই দায়িত্বে আছেন তারা এটি তাকিয়ে দেখছেন।’
সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, ‘দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন। এটা বাস্তব। কিন্তু মব তৈরি করে কি কোনো সমাধানে আসা যাবে? কোন আইনের কোন বিধানে মবের পক্ষে বলা আছে? কোথাও বলা নেই। যারা মব করছে তাদের বিচার হওয়া জরুরি। আইন কখনোই মবকে সমর্থন করে না।’
এই মানবাধিকার কর্মী আরও বলেন, ‘মব থামানো না গেলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। এখনই এর নাটাই টেনে ধরা উচিত।’
এআইএম/জেবি

