শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা ছাড়াই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়: আপিল বিভাগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

atm ajharul islam
এটিএম আজহারুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা ছাড়াই জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (২৭ মে) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে একথা বলেন আপিল বিভাগ।
 
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।
 
রায়ের পর্যবেক্ষণ সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা ছাড়াই তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছিল।’


বিজ্ঞাপন


আপিল বিভাগ রায়ে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এগুলো হলো-

১। মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে অতীতের রায়গুলোতে বাংলাদেশসহ এই সাবকন্টিনেন্টে ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি চেইঞ্জ করে দেওয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচাইতে বড় ভুল।
২। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ অ্যাসেসমেন্ট তথা পর্যালোচনা করা ছাড়াই এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
৩। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ট্রাভেস্টি অব ট্রুথ (travesty of trut)h অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার।
৪। যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পরে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলেন, সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে।
 
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
 
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটাই মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম কোনো মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায় এবং আসামি খালাস পেলেন।

এই রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।


বিজ্ঞাপন


আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এই রায়ের ফলে সত্য বিজয় হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। এটিএম আজহারের ওপর এটি ছিল নজিরবিহীন নির্যাতনে সামিল। পৃথিবির ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর  মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। যদিও এটি প্রহসনের রায় বলে আখ্যায়িত করে আসছে জামায়াতে ইসলামী।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে জামায়াত নেতা আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়। গত ৮ মে এই মামলায় এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষ হয়।

এআইএম/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর