বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘিরে আগামীকাল বুধবার (১৫ মে) সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, প্রতীকের বিষয়ে আংশিক শুনানি ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে বুধবার সকাল ৯টায়। এ সময় প্রতীক সংক্রান্ত আপিল ও অন্যান্য আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
শিশির মনির বলেন, ‘আমরা আদালতে বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। আজকে প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। আগামীকাল পুরোপুরি শুনানি হবে। প্রতীক-সংক্রান্ত আবেদনটি জামায়াতের আগের করা আপিলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের বিষয়টি আগে থেকেই আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই দলটি ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পেতে নতুন একটি আবেদন করে। এই আবেদনে বলা হয়, দলটির পুরোনো প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় একটি রেজল্যুশন গৃহীত হয়, যেখানে বলা হয় ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক কেবল সুপ্রিম কোর্টের ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এই প্রতীক অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনকে যেন বরাদ্দ না দেওয়া হয়—এ বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী এই রেজল্যুশনের বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদন করেছে, যাতে দলটির নিবন্ধন পুনর্বহাল হলে পুরোনো প্রতীকও ফেরত পাওয়া যায়।’
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করে, যাতে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ কেবল আদালতের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
চিঠির শেষাংশে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেসব ক্ষেত্রে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে, সেগুলো বাতিল করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটি যে আপিল করেছিল, তা ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়। কারণ, ওই দিন শুনানিতে দলটির পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। ফলে মামলাটি 'ডিসমিসড ফর ডিফল্ট' হিসেবে খারিজ হয়।
পরবর্তীতে জামায়াত সময়মতো শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে এবং আপিল পুনরুজ্জীবিত করার (রিস্টোর) জন্য আবেদন করে। সেই আবেদন গ্রহণ করে আপিল বিভাগ গত বছরের ২২ অক্টোবর রিস্টোর আদেশ দেয়। এরপর আবার আপিল শুনানির তালিকায় উঠে আসে এবং ৩ ডিসেম্বর থেকে একাধিক দিনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এআইএম/এইউ

