মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানিতে সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। তিনি বলেছেন, মামলার দুটি সাক্ষ্যেই ঘটনার বর্ণনায় ভিন্নতা রয়েছে, যা এই মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে শুনানি হয়। বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুনানি শুরু হয় এবং ১১টায় আদালত বিরতিতে যান।
বিজ্ঞাপন
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, প্রসিকিউশনের ১১ ও ১২ নম্বর সাক্ষী সাখাওয়াত হোসেন রাঙ্গা ও তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন আজহারের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। রাঙ্গা বলেন, আজহার ডান হাত দিয়ে তার ডান গালে থাপ্পড় দেন। অথচ স্বাভাবিকভাবে ডান হাতের থাপ্পড় সাধারণত বাম গালে লাগে। এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন— ‘ডান হাতের থাপ্পড় কীভাবে ডান গালে লাগল?’
শুধু তাই নয়, রাঙ্গা বলেন, তিনি থাপ্পড়ে ছিটকে পড়ে যান ও অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অথচ পরে দাবি করেন, অজ্ঞান অবস্থায় আজহার তাকে নির্যাতন করেন। আইনজীবীর প্রশ্ন, অজ্ঞান থাকা অবস্থায় কীভাবে নির্যাতনের বিষয়টি রাঙ্গা জানলেন?
অন্যদিকে, রাঙ্গার ভাই সাজ্জাদ আদালতে বলেন, আজহার রাঙ্গাকে ডান হাতে বাম গালে থাপ্পড় দেন। একই ঘটনায় এমন দুই রকম বর্ণনা সাক্ষ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে আদালতকে জানান শিশির মনির।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলায় যদি যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ থাকে, তাহলে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। তিনি বিভিন্ন মামলার নজির আদালতে উপস্থাপন করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বই ‘ব্রোকেন ড্রিম’-এর একটি অংশও তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
শিশির মনির বলেন, ‘আমরা সময়ের প্রেক্ষাপটে আজ আপনার কাছে এসেছি। এটা সম্ভব হয়েছে ৫ আগস্টের পর দেশের পরিস্থিতির বদলের কারণে।” তিনি আদালতে এটিএম আজহারের বার্তা তুলে ধরে বলেন, “তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করো, কারো কাছে বলার দরকার নেই।’
এই শুনানিতে আজহারের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ নম্বর অভিযোগ নিয়ে কথা হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এর আগে ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনাল আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০১৯ সালে আপিল বিভাগ এই রায় বহাল রাখে। পরে তিনি ২০২০ সালে রিভিউ আবেদন করেন এবং চলতি বছর তার পূর্ণাঙ্গ আপিলের শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়।
এআইএম/এইউ