বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ বলায় পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মদ হাসানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
গত ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিবের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, এই নাগরিকদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ পাকিস্তানে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। এখন পর্যন্ত ‘আটকেপড়া’ ২৬ হাজার ৯৪১ জনকে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তথ্য অনুযায়ী দেশের ১৪টি জেলার ৬৯টি ক্যাম্পে প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন উর্দুভাষী রয়ে গেছেন।
আইনি নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী নাগরিকদের ‘আটকেপড়া’ পাকিস্তানি বলে উল্লেখ করাটা অপমানজনক, মানহানিকর ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টির আগে এবং পরে নোটিশ প্রদানকারী মোহাম্মদ হাসানের পূর্বপুরুষ এবং অন্যান্য উর্দুভাষী মুসলমানেরা ভারতে তাদের বাড়ি ছেড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং বিভিন্ন জেলায় বসবাস শুরু করেন। তারা তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা ইত্যাদি রাজ্য থেকে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন এবং তাদের সন্তানদের অনেকেই এই ভূখণ্ডে (বাংলাদেশে) জন্মগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের এসব সদস্যদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের আইনগত মর্যাদা নিশ্চিত হয়।
আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমগ্র উর্দুভাষী সম্প্রদায়কে ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ বলে অপমান করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী এবং তাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান থেকে হিজরত করে আসেনি। তারা এই ভূমির অধিবাসী এবং তাদের বেশিরভাগ জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। শুধুমাত্র তাদের মাতৃভাষার উপর ভিত্তি করে তাদের ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ হিসেবে উল্লেখ করা এক ধরনের ঘৃণামূলক বক্তব্য। যা মানহানিকর এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তাই অবিলম্বে উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের নাগরিকদের উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করা এবং একটি বিবৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় যথাযথ আইনি প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এআইএম/এফএ

