বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

‘ব্যারিস্টার তুরিন ছিল পরাক্রমশালী’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ব্যারিস্টার তুরিন ছিল পরাক্রমশালী’

বাড়ি সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেছেন, ‘ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর থাকাকালীন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং তিনি একসময় পরাক্রমশালী ছিলেন।’

বুধবার (১২ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। শুনানির পর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তুরিন আফরোজ এক মুহূর্তে তার মাকে উত্তরার বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।’ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এখন তার মায়ের জন্য উত্তরায় ওই বাড়িতে থাকার নির্দেশনা চাচ্ছি।’

এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি, হাইকোর্টের এক রায়ে উত্তরার পাঁচতলা বাড়িতে তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার বেগম এবং তার ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ আহমেদের বসবাসের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানানো হয়। এটি ছিল বিচারিক আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ বাতিল করার ফলস্বরূপ। ২০১৭ সালে, তুরিন আফরোজ তার মাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেন, যা নিয়ে তাদের মধ্যে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়।

এ সময় তুরিন আফরোজ দাবি করেছিলেন, তার মা শামসুন্নাহার বেগম ১৯৯১ সালে ক্রয়সূত্রে ওই বাড়ি কিনেছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে তিনি তার স্বামী তসলিম উদ্দিনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিযুক্ত করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে তসলিম উদ্দিন তুরিন আফরোজকে ওই সম্পত্তি হেবা (দানপত্র) করেন। কিন্তু শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাহনেওয়াজ আদালতে লিখিত জবাব দিয়ে বলেছেন, তসলিম উদ্দিন কখনও তুরিন আফরোজকে সম্পত্তি দান করেননি। বরং ১৯৯৭ সালে তিনি নিজে তার ছেলে শাহনেওয়াজকে সম্পত্তি হেবা করেন এবং পরে ওই জমি শাহনেওয়াজের নামে নামজারি করে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়।

এদিকে, ২০০২ সাল থেকে শামসুন্নাহার বেগম এবং তার ছেলে শাহনেওয়াজ ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তার মাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং বাড়ির ভোগদখল ও মালিকানা দাবি করেন। পরবর্তীতে, শাহনেওয়াজ এবং তুরিন আফরোজ ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন।


বিজ্ঞাপন


২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর, দুটি মামলার শুনানির পর ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ওই বাড়ির ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরপর, ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলা জজ আদালত যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশ বহাল রাখে। পরে, ২০২৩ সালের মার্চে, শাহনেওয়াজ জেলা জজ আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করেন।

২০২৩ সালের ২ এপ্রিল, বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই বাড়ির ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থার আদেশ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে।

শেষ পর্যন্ত, ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল যথাযথ (অ্যাবসুলেট) ঘোষণা করে এবং স্থিতাবস্থা বাতিল করে রায় দেয়। এর ফলে, ওই বাড়িতে শাহনেওয়াজ ও তার মা শামসুন্নাহার বেগমের বসবাসের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। বর্তমানে, বাড়ির ভোগদখল ও মালিকানা দাবি করে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারিক আদালতে স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।

এ বিষয়ে আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার মনজুর রাব্বী ও ব্যারিস্টার আতিকুল হক। তুরিন আফরোজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল করিম।

আইনজীবী আতিকুল হক আদালতে বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর সড়কের ৩ সেক্টরের ১৫ নম্বর প্লটের পাঁচতলা বাড়িতে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন শামসুন্নাহার বেগম এবং তার ছেলে শাহনেওয়াজ। তবে নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তাদের ওই বাড়ি থেকে বের করে দেন।’

এদিকে, বিচারিক আদালতের মামলার আরজিতে তুরিন আফরোজ দাবি করেছেন, ‘১৯৯১ সালে তার মা শামসুন্নাহার উত্তরার সম্পত্তির মালিক হন। পরের বছর ১৯৯২ সালে তিনি তার স্বামী তসলিম উদ্দিনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিযুক্ত করেন।’ 

তবে, শামসুন্নাহার এবং তার ছেলে শাহনেওয়াজ আদালতে লিখিত জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘তসলিম উদ্দিন কখনো তার মেয়ে তুরিন আফরোজকে উত্তরার সম্পত্তি দান করেননি। বরং শামসুন্নাহার তার ছেলে শাহনেওয়াজকে ১৯৯৭ সালে হেবা করে দেন।’

এআইএম/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর