বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব আসামি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই মামলার রায় ঘোষণার সময় একটি পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই বিদ্বেষমূলকভাবে এই মামলা করা হয়েছিল।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ‘এতিমদের টাকা মেরে খাওয়ার’ যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি বলে খালেদা জিয়াকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার হারানো সেই সম্মান আদালত রিস্টোর করল। অর্থাৎ তার পূর্বের সম্মান তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায় প্রদান হয়েছে উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেন, এ মামলার বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাতিল করা হলো। ফলে সব আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত না করে তাদের সম্পূর্ণ খালাস দেওয়া হলো।
আদালত বলেন, আপিলের বিষয়বস্তু থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ মামলায় আইনের কাল্পনিক অপপ্রযোগ ঘটেছে। সেই বিবেচনায় এটি একটি বিদ্বেষপূর্ণ মামলা। এই রায় অন্যান্য আপিলকারী এবং যারা আপিল করেননি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
বিজ্ঞাপন
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, এ মামলায় আসামিদের যে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তারা হারানো সম্মান ফিরে পাবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অযৌক্তিক বিচারিক কার্যক্রমের অবসান ঘটবে।
আদালত থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রায়ের পর্যবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এ সময় কায়সার কামাল বলেন, সবকিছুই ছিল পলিটিক্যাল স্ক্রিপ্ট। বিচারিক আদালতে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল, তবে হাইকোর্ট সেটি ১০ বছর করে। কিন্তু আজকে আপিল বিভাগ সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও এতে প্রমাণিত হলো, তারেক রহমান সাহেব নির্দোষ ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা ও রায় বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ন্যায়বিচার পেয়েছি, আমরা সন্তুষ্ট। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আজকে মনে হলো বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে, আমরা ন্যায্য বিচার পেয়েছি। দীর্ঘদিন পর আদালত আজ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মুক্ত করে দিলেন, আমরা সবাই খুশি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরেও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। তবে সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন। সে অনুযায়ী আইনি লড়াই চালিয়ে অবশেষে বেকসুর খালাস পান খালেদা জিয়া।
এআইএম/জেবি