সারাদেশের মহাসড়ক ও ফ্লাইওভারে অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বাহাউদ্দিন আল ইমরান এই নোটিশ পাঠান।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিবালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ পাঠানো আইনজীবী বলেন, আমি বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক ও বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন নিয়মিত আইনজীবী। আমি দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছি এবং সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অনুবলে জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছি।
আইনজীবী বাহাউদ্দিন আল ইমরান আরও বলেন, সারাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল গুণীতক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে অলিগলিতে চলাচল করলেও বর্তমান সময়ে এসব রিকশা চালকেরা সড়ক-মহাসড়ক এমনকি ফ্লাইওভারের ওপরেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে।
অপ্রশিক্ষিত এসব অটোচালকদের ভুলে বিঘ্ন হচ্ছে সড়কে মানুষের বা অন্যান্য বাহনের স্বাভাবিক চলাচল। কোনরকম নিয়ম-শৃঙ্খলা না মেনে খেয়াল-খুশিমত মুহূর্তে তারা সড়কের এপাশ-ওপাশ করে যাত্রী পারাপার করছে।
বিজ্ঞাপন
এসব চালকদের লাইসেন্স বা বৈধ ডকুমেন্টস না থাকায় তাদের আটকাতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। অন্যান্য পরিবহন অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা গেলেও অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে করণীয় বুঝে উঠতে পারছেন না ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। কোনরকম সিগন্যাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এমনকি মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রেও পাল্লা দিয়ে চলছে এসব যান্ত্রিক রিকশা। অনেকাংশে এর চালকরা অপ্রাপ্তবয়স্ক বা বৃদ্ধ হয়ে থাকেন। যাদের পক্ষে একটি গতিসম্পন্ন বাহনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
বাহাউদ্দিন আল ইমরান আরও বলেন, বিগত সরকার দেশের অলিগলিতে অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নানা অজুহাতে দেশজুড়ে এসব অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বেড়েই চলেছে। আগে অলিগলিতে চলাচল করলেও বর্তমান সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রধান সড়ক এবং ফ্লাইওভারেও এসব রিকশা চলাচল শুরু করেছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, কোনরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াও যত্রতত্র এসব রিকশা চলাচলের কারণে সারাদেশে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার সংবাদ পত্রিকা বা টেলিভিশনে পুরোপুরি প্রকাশিত হচ্ছে না।
বিগত ১০ নভেম্বর সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারাদেশে ৪০৫টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে।' এছাড়া আহত হয়েছেন ৪১৫ জন। ৪০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মোটরকার বা জিপ দুর্ঘটনায় ৯ জন, বাস বা মিনিবাস দুর্ঘটনায় ৪২ জন, ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৮২ জন, পিকআপ দুর্ঘটনায় ১২ জন, মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় দুই জন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১১০ জন, ভ্যান দুর্ঘটনায় ১২ জন, ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় একজন, ইজিবাইক দুর্ঘটনায় ১৪ জন, ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ১৮ জন, অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ৩৪ জন ও অন্যান্য যান দুর্ঘটনায় ৭৯ জন। অর্থাৎ শুধু অক্টোবরেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৬৬ জন প্রাণ হারান।
এছাড়াও এসব রিকশার আঘাতে শত শত মানুষ আহত হলেও তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি বলে জানায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৯ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশার আঘাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রচির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
দ্রুত চলাচলের ক্ষেত্রে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অনেক সুফল রয়েছে। কিন্তু কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সড়কজুড়ে দিন দিন তাদের নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাদেশের মানুষের মাকে এসব রিকশা নিয়ে অসন্তোষ আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। একইসঙ্গে অন্যান্য পরিবহনের ফেলে দেওয়া যা ব্যবহারের অনুপোযুক্ত যন্ত্রপাতি ও পুরাতন ব্যাটারি দিয়ে কোনমতে তৈরি করা এসব রিকশা জনমানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বেরসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি'তে 'রাজধানীতে ব্যটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ে চলছে নৈরাজ্য', চলতি বছরের ১১ সেন্টম্বর এখন টিভিতে 'রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা', ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি দৈনিক দেশ রুপান্তর-এ 'নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে ইজিবাইক নৈরাজ্য', ৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় 'বেপরোয়া অটোরিকশা বাড়ছে দূর্ঘটনার ঝুঁকি', ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় 'মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, বেপরোয়া অন্যরাও', ১০ অক্টোবর এটিএন নিউজে 'সড়ক মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য', ২৮ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় 'তবুও বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা', ১২ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিনে 'সাতক্ষীরায় অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইকের নৈরাজ্য', ২০ নভেম্বর দৈনিক কালেরকণ্ঠে 'ময়মনসিংহ শহরে ইজিবাইক চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য', অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ডটকম-এ ৩ অক্টোবর 'খুলনায় ইজিবাইক নৈরাজ্য', ১০ সেপ্টেম্বর বার্তা২৪ডটকম-এ 'রাস্তায় রাজায় পরিণত ব্যাটারিচালিত রিকশা, নিয়ন্ত্রণ কিভাবে?' শিরোনাম সহ দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এসব যান্ত্রিক রিকশার নৈরাজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে জনমানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। যেখানে দেখা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত এসব পরিবহনের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
অটোরিকশা বা ইজিবাইকের ব্যাটারিগুলো চার্জনির্ভর। প্রতিদিন একাধিকবার এর ব্যাটারি চার্জ করতে হয়। ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য অবৈধভাবে কয়েক হাজার গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব অবৈধ লাইনে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ। যার ফলে বর্তমান সময়ে সারাদেশে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গত ১৯ নভেম্বর একটি রিট পিটিশনের (১২৬৯০/২০২৪) মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত মনে করায় রাজধানী ঢাকা মহানগরীর প্রধান সড়কেগুলোতে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই উক্ত আদেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের প্রধান সড়ক-ফ্লাইওভারগুলোতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধ হওয়া আবশ্যকীয় বটে। এমতাবস্থায় অত্র নোটিশ প্রাপ্তির ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে সারাদেশের প্রধান সড়ক-ফ্লাইওভারগুলোতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
ব্যর্থতায় দেশের প্রচলিত আইন সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে দেশের উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করতে বাধ্য হব।
এআইএম/এমআর