‘আজ যে পরিবেশ দেখছেন আগামীকাল তা থাকবে এটা মনে করবেন না’ এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, আমরা একে অপরের ভাই ভাই। মিলে-মিশে থাকা উচিত। আমরা এক সাথে থাকবো। কেন দ্বন্দ্বে জড়াব?
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে একথা বলেন আমু।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, আমি ঢাকা বারের সদস্য, হাইকোর্ট বারের সদস্য। এখানকার পরিবেশ দেখে দুঃখিত। এই পরিবেশে কিছু বলা উচিত না। মামলা চলবে। ভবিষ্যতে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করবো। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনেক কথা বলেছেন। আমি একজন রাজনিতিবিদ। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে গেলে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি খবর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারের? আইনজীবীরা তো ভালোই ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় সিল মেরে ভোট নিয়ে গেছে, আইনজীবীদের মারধর করেছে। তখন তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?
পরে আমু বলেন, প্রথমবার যখন গোলমাল হয় আমি এর বিরোধিতা করি। ভোট দিতে আসিনি, বয়কট করেছি।
পরে আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে ফারুকী বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে ভুল বুঝিয়ে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করেন আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। স্বৈরাচারী বাকশাল তৈরি করেন। রক্ষীবাহিনী গঠন করে ৩৫ হাজার জাসদ নেতা হত্যা করেছেন। যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে সুফল ঘরে তুলতে চেয়েছিল তাদের রাজনীতি থেকে কোনঠাসা করেন। শেখ হাসিনাকে একইভাবে স্বৈরাচার করে তুলতে নিকৃষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। গুম, খুন ,হত্যা, আয়নাঘরের কারিগর মূলত তারাই।
তিনি বলেন, আবার ওয়ান ইলেভেনের সময় তারা আবার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছে। চৌদ্দ দলের নেতা, যারা কোনও এলাকার মেম্বর হওয়ার যোগ্য নয়, তারা মহাজোটের নামে ভন্ডামি করেছে। তাদের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ দলগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনের ৪ আগস্টের আলোচিত মিটিং করে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আমির হোসেন আমুর বিপুল অংকের টাকা, স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়া, টাকার জাজিমে ঘুমানো ও লুটপাটের তথ্য তুলে ধরেন। ওয়াদুদ হত্যা মামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে আমির হোসেন আমু সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে আমুর সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করেন।
এসময় ওমর ফারুক ফারুকীর বক্তব্যকে রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেন আমুর আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরী। পরে তাকে মারধর করে আদালত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় আদালত কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখা যায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এরপর আমুর পক্ষে অন্য আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত আমুর বক্তব্য শুনতে চান।
উল্লেখ্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে বুধবার (৬ নভেম্বর) গ্রেফতারের তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় নিহত আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
/এএস