স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ অনেক সরকারি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের খবর মাঝেমধ্যে আসে গণমাধ্যমে। এবার বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। পিএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত চক্রের ১৭ সদস্যেকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির প্রশ্নফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বনে গেছেন অঢেল সম্পদের মালিক।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছুতেই সুফল মিলছে না। আর এর জন্য ‘ব্যবস্থা না নেওয়াকে’ দুষছেন আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, বিচার কম হওয়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া। সাজা হলে তারা কিছুটা হলেও ভয় পেত।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বার বার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটছে। মেডিকেলে ভর্তিসহ বড় বড় পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। আর এসব অপরাধের বিচারও হচ্ছে না। বিচার হলে, সাজা হলে অপরাধীরা কিছুটা হলেও ভয় পেত। সাজা কম বেশি যাই হোক না কেন, বিচারইতো ঠিকমতো হয় না। যার কারণে অপরাধীরা অপরাধ করেই যাচ্ছে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের ঘটনা অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। এ নিয়ে অনেক ফৌজদারি মামলাও হয়েছে। এসব অপরাধের সাজা হয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। প্রশ্ন ফাঁসকারীদের আঁতুরঘর চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
বিজ্ঞাপন
তবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনার বিচার হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। ঢাকা মেইলকে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার জানামতে এসব ঘটনার বিচার হয়েছে। পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিচার অবশ্যই হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
আমিন উদ্দিন বলেন, ‘যদিও আইনের ফাঁকফোকরে অনেক আসামি বের হয়ে যাবে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বিচার হতেই হবে। যারা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘পিএসসির পরিচালনায় পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁসসহ যেকোনো অসদুপায় রোধে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের ১১/১৫ ধারায় করা মামলায় ইতোমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্তে আরও আসামির নাম উঠে আসতে পারে। এ আইনে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’
আর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ দাবি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই তারা জামিনে মুক্ত হবেন এবং বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।
কী আছে আইনে
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আইন ২০২৩ এর ১১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার আগে ওই পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল আছে বলে কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধে তিনি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারায় বর্ণিত অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আইন ২০২৩ এর ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, পরীক্ষা পরিচালনার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী এই আইনের অধীন কোনো অপরাধে সহায়তা করলে তিনি যে ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করবেন, সেই ধারায় বর্ণিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী বলতে কমিশনের গৃহীত কোনো পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
এআইএম/এমআর