চাকরি শেষে পাওনা আদায়। চাকরিতে পুনর্বহাল। মালিক-শ্রমিক চুক্তির লঙ্ঘন, বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধার দাবি, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে একটি আদালত রয়েছে। সেটি হচ্ছে শ্রম আদালত। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন এ আদালতের বিচারক হবেন। তিনি শ্রম আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিভিন্ন গবেষণার দাবি, শ্রম আদালতের একটি মামলার রায় ঘোষণা করতে নির্ধারিত সময়ের অনেক গুণ বেশি সময় লাগে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এমন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২০২১ সালে। সেই প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে আঘাত ও মৃত্যুর শিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে দায়ের করা ৮০টি ক্ষতিপূরণ মামলা বিশ্লেষণ করেছে ব্লাস্ট।
বিজ্ঞাপন
‘টায়ার দেম আউট: চ্যালেঞ্জেস অব লিটিগেটিং কমপেনসেশান ক্লেইমস আন্ডার বাংলাদেশ লেবার অ্যাক্ট ২০০৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, শ্রম আদালত কর্মক্ষেত্রে আঘাত ও মৃত্যুর মামলাগুলোর রায় দেওয়ার জন্যে গড়ে ৬০১ দিন সময় লাগে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশের অন্যান্য আদালতের তুলনায় চট্টগ্রামের শ্রম আদালত মামলার নিষ্পত্তির জন্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ সময় নিয়েছে; গড়ে এক হাজার ২৮০ দিন। এত দীর্ঘ অপেক্ষাও অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না। কারণ, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবেই আদালতের রায়কে অমান্য করে আসছেন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের/ কর্মীদেরকে ভিন্ন পথ অবলম্বনের মাধ্যমে ফৌজদারি মামলা করে তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হয়। এপথেও তাদেরকে আবারও আরেকটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হয়।
ব্লাস্টের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগদাতারা রায় ঘোষণার পর ভুক্তভোগীকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে গড়ে ৪৭৫ দিন সময় নিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে একজন কর্মী বা কর্মীর পরিবারকে তাদের প্রাপ্য টাকা পেতে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ২০১৬ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছিল। এর আগে দায়ের করা মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
ব্লাস্টের প্রতিবেদনে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক নির্মাণ শ্রমিক ৬০ কেজি ওজনের বালু কাঁধে নিয়ে একটি দুর্বল মই বেয়ে ওঠার সময় পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বাড্ডার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। উপর থেকে পড়ে যাওয়ার পর তার কোমরের নিচ থেকে শরীরের সম্পূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। এর ফলে বাকি জীবন তিনি হাঁটতে বা কোনো ধরনের কায়িক শ্রম করতে পারবেন না যা একজন তরুণ নির্মাণ শ্রমিকের জন্যে মৃত্যুদণ্ডের সমান।
বিজ্ঞাপন
দুর্ঘটনার সময় জুয়েল যে বাড়ির মালিকের অধীনে কাজ করছিলেন তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের জুনে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। দীর্ঘ চার বছর ধরে মামলা চলার পর জুয়েলের পক্ষে আদালত রায় দেন। কিন্তু, তাতেও কোনো কাজ হয়নি। আদালত লিয়াকত আলীকে দুই মাসের মধ্যে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, ২০২১ সালে এসেও জুয়েল তার সাবেক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি টাকাও পাননি। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৫০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।
এআইএম/এএস