শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

অতি গরমে বদলে গেছে আইনজীবীদের প্রাত্যহিক রুটিন

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৩ এএম

শেয়ার করুন:

অতি গরমে বদলে গেছে আইনজীবীদের প্রাত্যহিক রুটিন

ঢাকাসহ দেশের ৪৫টির বেশি জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একইসাথে, দিনের গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একে একে চারবার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় মানুষ যেভাবে পারছে তাপ থেকে বাঁচতে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের মতো গরমের তীব্রতায় আদালত অঙ্গনেও সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। একটু শান্তি পেতে আদালতের সময় পরিবর্তন করেছেন আইনজীবীরা।

আগে কোর্টে আসতাম ৯ টার দিকে। এখন আসি তারও একটু আগে। কারণ অতি গরম। অসহনীয় তাপমাত্রা, তাই ঠান্ডা থাকতে কোর্টে আগেই আসছি বিগত কয়েকদিন যাবত, এমনটাই বললেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। তিনি এই আদালতের একজন নিয়মিত আইনজীবী। আদালত পাড়ায় তাকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়। মামলাও পরিচালনা করেন নিয়মিত। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। 


বিজ্ঞাপন


মাকসুদ উল্লাহ আরও বলেন, এতো গরম আগে দেখিনি। কোর্টের মামলা-মোকাদ্দমাসহ সব কাজ শেষ হলেও বের হই দেরি করে। আগে কোর্ট থেকে বের হতাম বিকেল ৫টায় আর এখন এক ঘণ্টা পরে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হই। কারণ গরম খুব জেঁকে বসেছে।

এরকম শুধু মাকসুদ উল্লাহ নন, অনেক আইনজীবীর লাইফস্টাইলেই এসেছে পরিবর্তন। কারণ অতি গরমেও সুপ্রিম কোর্টে কোট পড়ে মামলা পরিচালনা করতে হয়। গরমের কারণে প্রধান বিচারপতি এই অঙ্গনের আইনজীবীদের গাউন না পরার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। যদিও বিচারিক আদালতে শুধু সাদা শার্ট আর কালো টাই পড়েই এজলাসে শুনানি করতে পারেন আইনজীবীরা।

আরও পড়ুন

তাপদাহে স্বস্তি দিচ্ছে আদালত চত্বরের গাছের ছায়া

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী কেএম আশরাফ রাব্বী ঢাকা মেইলকে বলেন, অতি গরম আর সহ্য হচ্ছে না। দুপুরের সময়টা অসহ্য গরম লাগে। মনে হয় কখন যেন অস্থির হয়ে যাই। আর ঢাকা কোর্টে আইনজীবীর সংখ্যা অনেক বেশি। 


বিজ্ঞাপন


lifestyle

এই আইনজীবী আরও বলেন, আদালত পাড়ায় মানুষ বেশি হওয়ায় গরমে যন্ত্রনাও বেশি হয়। তার মতে কোর্টের সময়ে পরির্তন আনা উচিত। সকাল দশটার পরিবর্তে মর্নিং কোর্ট করলে ভালো হয়। গরম যতদিন না কমবে ততদিন মর্নিং কোর্ট করলে আইনজীবী মক্কেল সবাই এই সময় মেইনটেইন করবে।

তবে এই গরমে কোর্ট টাইমের পরিবর্তন আনার বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মো. খাদেমুল ইসলাম। তার মতে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত মতে আইনজীবীদের জন্য কোর্ট করা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। কারণ পোশাকের ক্ষেত্রে অনেকটাই ঢিলেঢালা করে দেওয়া হয়েছে।  নিম্ন আদালতে হাজিরা, সাক্ষী নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে কোর্ট টাইম। এজন্য আমি মনে করি আদালতের সময় পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।

এদিকে বিচারিক আদালতের কক্ষে এয়ার কন্ডিশন (এসি) বসানো প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছেন অনেকেই। জানতে চাইলে ঢাকা বারের আইনজীবী তুষার মন্ডল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের ঢাকা কোর্টের আইনজীবী ও মক্কেলের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে এমনিতেই অনেক গরম। তারপর বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডং। দশতলা বিল্ডিংও আছে। অনেক সময় লিফটে ভিড় থাকায় আইনজীবী মক্কেলকে হেটে হেটে উঠতে হয় উপরে। তখন কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। আমাদের কোর্টের এজলাসে আইনজীবী, মক্কেল, পিওন, পেশকার বেশি থাকায় ঠাসাঠাসি অবস্থা। বসার জয়গা কম।  তাই গরমও বেশি। কোর্টের প্রত্যেকটা এজলাসে এসি বসানো উচিত বলে মনে করি। অতি গরমে আগের মতো সময় করে নির্ধারিতভাবে কোর্টে আসতে পারি না। অতি গরমে শরীরটা ভালো লাগে না। তাই সকাল সকাল ঠান্ডা থাকা অবস্থায় কোর্টে চলে আসি। আবার কোর্ট থেকে বের হই অনেক পরে। আবহওয়া সােপার্ট করলে।

আইনজীবীর পাশাপাশি গরম থেকে বাঁচতে মক্কেলসহ অনেকের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এসেছে। তাই কোর্টে এসে ফ্যান-এসির পাশাপাশি বিশ্রাম নেন গাছের ছায়ায় বসে-শুয়ে। কেউ মাদুর পেতে, কেউ ঘাসের উপর, কেউবা আবার বসে থাকেন রাস্তার পাশে। প্রচণ্ড গরমে দেশে পর পর চার দফায় দেওয়া হয়েছে হিট অ্যালার্ট। কবে নাগাদ এই গরম শেষ হবে, আর শান্তি ফিরে পাবে সাধারণ মানুষ, এমন প্রশ্ন সবার।

এআইএম/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর